সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বলে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টা ৫২ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
এ সময় ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর বলেও জানানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলেধরা হলো-
‘সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে সরকার জনদাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে।
এছাড়া, সরকারের পক্ষে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভের বিষয়ে সরকার অবগত। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর রয়েছে।’
এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার সামনে জুমার নামাজ আদায় করেছেন আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীরা এ নামাজ আদায় করেন। এতে ইমামতি করেন জাতীয় নাগরিক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা মাওলানা সানাউল্লাহ।
এদিকে জুমার পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বড় জমায়েতের ডাক দিয়েছেন এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পাশে মিন্টুরোডের পানির ফোয়ারার সামনে এই জমায়েত হবে।
তার আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে এনসিপি, ছাত্রশিবির, ইনকিলাব মঞ্চ, চরমোনাইসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
শুক্রবার সকাল থেকে যমুনার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন এনসিপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ ও শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে যমুনার আশপাশের এলাকায় সতর্কতা বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে কাকরাইল সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। ওই সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পুলিশসহ অন্য বাহিনীগুলোর নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। দুপুরে যেহেতু সমাবেশ তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে যমুনার সামনের সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে।
যমুনার আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।