বাংলাদেশে জন্মনিবন্ধনের দুর্বলতা ও পরিচয় সংকট নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য যথার্থ উদ্বেগজনক। তিনি তুলে ধরেছেন, বিশ্বের কোনো দেশে ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারীর সংখ্যা বাংলাদেশে যেমন বেশি, তা আর কোথাও নেই। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়—আমাদের অনেকেই প্রকৃত জন্মতারিখই জানি না।
তিনি বলেন, দেশের বহু মানুষ এমন যার নিজের নাম পর্যন্ত জানা নেই। একজন নারীর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তিনি শুধু কারো মেয়ে, কারো স্ত্রী, কারো মা—নিজের নাম নেই, পরিচয় নেই। অথচ এরা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ড. ইউনূস এই সমস্যাকে সামাজিক ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে বড় সমস্যা হচ্ছে জন্মতারিখ না জানা ও নাম নিয়ে অনিশ্চয়তা। অনেক ব্যক্তি বয়সের একটা অনুমান দিয়েই জন্মতারিখ বসান।
তিনি হাসপাতালভিত্তিক বাধ্যতামূলক জন্মনিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন, যেখানে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি নিশ্চিত করা হবে।
তাছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রায় ৫০% জন্মতারিখ ভুল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি বসানো হয় কারণ প্রকৃত তথ্য থাকে না। স্কুল-কলেজেও শিক্ষকরা পরীক্ষার জন্য জন্মতারিখ নির্ধারণ করেন, যা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয়।
ড. ইউনূস ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে বলেন, এই সমস্যার সমাধান না করলে পরবর্তী প্রজন্মও পরিচয়ের সংকটে ভুগবে। সেজন্য সঠিক, স্বয়ংক্রিয় ও বাধ্যতামূলক জন্মনিবন্ধন পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি, যা নাগরিক অধিকার ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।