জুলাই মাসের শুরুতেই আসতে পারে বহুল প্রতীক্ষিত 'জুলাই ঘোষণা'। এ ঘোষণায় সংবিধান স্থগিতের মতো বড় ধরনের সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রোধ ও রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে সংবিধান স্থগিত করে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক মহলে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চলছে।
বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরই সংবিধান স্থগিত করে একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করা উচিত ছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ইমরান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক মনে করেন, সেই সময়টি ছিল ‘মোমেন্ট অব পটেনশিয়াল রিভোলিউশন’। যদিও তখন রাজনৈতিক সংশয় ও আইনগত দোলাচলে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, এখন পরিস্থিতি স্পষ্ট এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘সংবিধান স্থগিত করা যায় না’—এমন ধারণা আইনি কাঠামো অনুযায়ী ঠিক হলেও, জনগণের অভিপ্রায়ই শেষ কথা।
সরকারের উচ্চপর্যায়ে রদবদলের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বিদায়ের সম্ভাবনা আলোচনায় এসেছে। সূত্র জানায়, নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব দেয়ার চিন্তা রয়েছে। এক্ষেত্রে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টা এবং ডা. শফিকুর রহমান উপপ্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন। বিকল্প সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়াকেও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে, যাতে একটি জাতীয় ঐক্য ও ঐতিহাসিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এবং ফ্যাসিবাদী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন। বর্তমান সংবিধান প্রশাসনিক কাঠামোর ফ্যাসিস্ট রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছে না। সচিবালয়, এনবিআর ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পুরনো আমলের প্রভাবমুক্ত নয়। রাজনৈতিকভাবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও হাসিনার নিযুক্তরা রয়ে গেছেন প্রশাসনের শীর্ষে, যা অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকরভাবে সংস্কার বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করছে।
ফলত, নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের সময়সূচি কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে। এতে করে নির্বাচন পরবর্তী সরকার নতুন সংবিধান ও পূর্ণ বৈধতার ভিত্তিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে।
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে যে, বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে না পারলে পদত্যাগ করতে পারেন—এমন বার্তাও দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সংবিধান স্থগিত করতে তার আপত্তি নেই বলেই জানা গেছে।
জুলাই ঘোষণা তাই শুধু রাজনৈতিক ঘোষণাই নয়—এটি হতে পারে বাংলাদেশে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় অধ্যায়ের সূচনা। যেখানে ড. ইউনূস ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ পেতে পারে একটি ঐকমত্যভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও প্রতিকূলতা প্রতিহতকারী শাসনব্যবস্থা।