ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর, গত আগস্টে ১৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষের বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নানা দিক থেকে চাপের মুখে পড়েছে তার নেতৃত্বাধীন সরকার। আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা একটি অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে সরকারি কর্মচারীদের বিক্ষোভের মধ্যেই আন্দোলনে নামেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার আবহে চলছে এই বিক্ষোভ।
সরকারের তরফ থেকে রবিবার জারি করা এক অধ্যাদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই অসদাচরণের অভিযোগে সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এতে কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। অধ্যাদেশটিকে ‘দমনমূলক’ আখ্যা দিয়ে সরকারি কর্মচারীরা সোমবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন। একইদিনে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় এনবিআরের কর্মীরাও বিক্ষোভে নামে। পরবর্তীতে সরকার ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়, যার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়, যখন এক শীর্ষ ছাত্রনেতা জানান যে, অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হলে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।
তবে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না বলে স্পষ্ট জানান তার পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শনিবার তিনি বলেন, “আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোথাও যাচ্ছি না।” তিনি আরও জানান, অধ্যাপক ইউনূস সব প্রতিবন্ধকতা স্বীকার করছেন, তবে তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সংস্কার—এই দুই বিপরীতমুখী চাপে রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। বিপরীতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে।
এদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত সপ্তাহে এক ভাষণে দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন, যা সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করেছে।
চলমান সংকটের মধ্যেই শনিবার অধ্যাপক ইউনূস তার উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা করেন। একই দিনে তিনি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যুদ্ধের মতো এক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর থেকে আমাদের অস্থিতিশীল করার নানা চেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
উল্লেখ্য, চলতি মাসেই শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে দলটি কার্যত আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না।