স্পেন, পর্তুগাল ও দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের কিছু অংশে সোমবার ভোরে আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনজীবনে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে। ব্যাপক এই বিপর্যয়ে এসব দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে গণপরিবহন, সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজট, বিলম্বিত হয়েছে ফ্লাইট এবং হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভোগান্তি।
পর্তুগালের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাতে দেশজুড়ে একযোগে বিদ্যুৎ চলে যায়। একই সময় স্পেনেও দেখা দেয় একই অবস্থা। মাদ্রিদের বারাজাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্পূর্ণ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে, যার প্রভাব পড়ে দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরেও। অচল হয়ে পড়ে বিমান চলাচল ব্যবস্থা।
বিভ্রাটের প্রভাব পড়ে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায়ও। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে যাওয়ায় মানুষ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এটিএম মেশিন বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায় এবং নগদ টাকার জন্য লাইন ধরে দাঁড়াতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে।
স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার সন্ধ্যায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং কয়েকটি প্রদেশ ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মাদ্রিদ, আন্দালুসিয়া ও এক্সট্রেমাদুরা।
স্পেনের জাতীয় বিদ্যুৎ সংস্থা রেড ইলেকট্রিকার তথ্যমতে, সোমবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ ব্যবহার প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়, যা দেশজুড়ে একপ্রকার ‘ব্ল্যাকআউট’-এর ইঙ্গিত দেয়। সংস্থাটি জানায়, নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাংশে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু হচ্ছে, তবে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতায় পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।
পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনিগ্রো এবং জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্র দু’জনেই নিশ্চিত করেছেন যে, এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পেছনে কোনও সাইবার হামলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একই তথ্য দিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তাও। ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করছে এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনার জেরে ইউরোপের শক্তিশালী অবকাঠামো এবং জরুরি সেবা ব্যবস্থার উপর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।
সূত্র: আলজাজিরা