বিশ্ব যখন নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর প্রকল্পগুলো জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য এই ধরণের প্রকল্পগুলো ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিবর্তে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিপুল বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এডিবির আসন্ন ৫৮তম বার্ষিক সভা (৪-৬ মে, মিলান, ইতালি) সামনে রেখে ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে মোংলার নারিকেলতলায় মোংলা নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক প্রতিবাদী প্রচারাভিযানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব ও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নূর আলম শেখ। তিনি বলেন, “এডিবি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে মোট ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে ৮২.৯% ব্যয় হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে। সৌর বিদ্যুতে মাত্র ২.৫৫% এবং বায়ু শক্তিতে কোনো বিনিয়োগই হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতি মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে যেখানে ০.৫১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেখানে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২.০৪ মিলিয়ন ডলার।”
প্রচারাভিযানে আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশযোদ্ধা মোঃ হাছিব সরদার, নারীনেত্রী ছবি হাজরা, আইরিন বিশ্বাস, ইয়ুথ লিডার মেহেদী হাসান, রোজি বিশ্বাস, বিভা বিশ্বাস, নাগরিক নেতা অসীম বিশ্বাস ও সঞ্জিত বিশ্বাস।
পরিবেশ কর্মী হাছিব সরদার বলেন, “খুলনার ১৫০ মেগাওয়াটের গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইড সাইকেল প্রকল্পে উন্নীত করতে এডিবি অতিরিক্ত ১০৪.১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু গত ১১ বছরে সরকারকে এই প্রকল্পে খরচ করতে হয়েছে ১,৮২৪ কোটি টাকা।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “রূপসায় ৮০০ মেগাওয়াটের এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রায় শেষ হলেও গ্যাস সরবরাহের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে এটি ‘অচল সম্পদে’ পরিণত হবে এবং সরকারকে গুনতে হবে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ।”
বক্তারা এডিবিকে অবিলম্বে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করে নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
এডিবির বার্ষিক সভা উপলক্ষে শুধু মোংলাই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার নানা শহরে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ আরও জোরদার হচ্ছে, যাতে উন্নয়ন সংস্থাগুলো জলবায়ু ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের বিনিয়োগ নীতি পুনর্বিন্যাস করে।
এই প্রতিবাদী কর্মসূচি জলবায়ু সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে, যারা জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করছে।
সংগৃহিত প্রতিবেদন