অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় দশ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত দেশের পুঁজিবাজারে একটি নতুন কোম্পানিও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (IPO) অনুমোদন পায়নি। বিএসইসিতে (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) নতুন কমিশন নিয়োগের পর বাজারে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে। বরং এই সময়ে ১৭টি কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করে কমিশন এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নেয়, যা বাজারে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য পুঁজিবাজার এখন এক অনিশ্চয়তার ক্ষেত্র। তারল্য সংকট ক্রমেই বাড়ছে, আর বিনিয়োগের বিকল্প সুযোগ না থাকায় বাজারে চাপ পড়ছে বিদ্যমান কোম্পানিগুলোর ওপর। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হলে বাজারে নতুন পুঁজি আসে না, বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয় না এবং কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির গতিও থমকে যায়।
বিএসইসি দাবি করছে, বর্তমান পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ কঠিন হওয়ায় আইপিও অনুমোদন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কমিশনের মুখপাত্র আবুল কালাম জানান, সংশ্লিষ্ট নিয়ম শিথিল করার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে শুধু কঠোরতা দিয়ে বাজার পরিচালনা করলে উন্নতি আসবে না।
২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশে আইপিওর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন হয়। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক অনিশ্চয়তা ও কমিশনের অদক্ষতার কারণে এই ধারা মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০২৪ সালে মাত্র চারটি কোম্পানি ৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় খুবই কম।
বিভিন্ন ইস্যু ম্যানেজার ও ব্রোকারেজ হাউজের মতে, ডিএসই-কে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষমতা দিলে এবং বিএসইসি শুধু তদারকি ও সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে তারা নিরীক্ষক ও ইস্যুয়ারদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথাও বলছেন, যাতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাজারে প্রবেশ বন্ধ হয়।
বর্তমান কমিশনের অধীনে পুঁজিবাজার কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে পাবলিক ইস্যু রুলস সহজ করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং আইপিও প্রক্রিয়া পুনরায় সক্রিয় করা জরুরি। নইলে বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে।