ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। গুজরাট থেকে দিল্লি, আসাম থেকে উত্তরপ্রদেশ—প্রায় সর্বত্রই সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশটির ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপির ‘এক দেশ, এক ধর্ম’ নীতির বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মুসলিম নিধনের এই আয়োজন চলছে বলে দাবি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্লেষকদের।
সম্প্রতি মিডল ইস্ট মনিটরের তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে মুসলিমদের ওপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র। বিশেষ করে আসাম, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ ও মোজাফফরনগরের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নিন্দা ও উদ্বেগের ঝড়।
উত্তরপ্রদেশের মোজাফফরনগরে প্রকাশ্যে এক মুসলিম নারীর হিজাব খুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মার্চ ফর ইন্ডিয়ান মুসলিম’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ‘ক্র্যাকডাউন’ নীতির অংশ হিসেবে মুসলিম বসতি উচ্ছেদ, বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই নিপীড়নকে ‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের চূড়ান্ত রূপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মানবাধিকার বিশ্লেষকরা।
উত্তরাখণ্ডে সম্প্রতি একসঙ্গে ১৭০টির বেশি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশের আলেম সমাজ বলেছে, “এটি কেবল ধর্মীয় বিদ্বেষ নয়, বরং একটি জনগোষ্ঠীকে সাংস্কৃতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা।” তাঁরা আরও বলেন, যদি বাংলাদেশে একইভাবে একসঙ্গে ১৭০টি মন্দির বন্ধ করা হতো, তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, জাতিসংঘ ও এনজিও মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হতো।
বাংলাদেশের আলেম সমাজ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এটি কেবল দ্বৈতনীতি নয়, বরং মুসলিম জাতিসত্তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ন্যারেটিভ যুদ্ধ।” তাঁরা মুসলিম বিশ্বের বিবেকবান মানুষ, সংগঠন ও আলেমদের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হিন্দু সমাজকেও প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, ভারতীয় ওয়াকফ সম্পদ দখল, নামাজ-হিজাব নিষেধাজ্ঞা ও মাদ্রাসা বন্ধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে শক্ত অবস্থান নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
অন্যদিকে, একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ উঠলেও ভারতের মতো কোনও ভিডিও বা প্রমাণ হাজির করা যায়নি। বরং ভারতের ঘটনাগুলো বাস্তব ও লোমহর্ষক।” তিনি সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের জন্য আল্লাহর হেফাজত কামনা করেন।
এই প্রেক্ষাপটে, ‘মার্চ ফর ইন্ডিয়ান মুসলিম’-এর মতো পদক্ষেপ এখন শুধু সময়ের দাবি নয়, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষার আহ্বান বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও এ বিষয়ে আরও সরব ভূমিকা গ্রহণের দাবি উঠছে সর্বমহলে। সূত্র:দৈনিক ইনকিলাব
ভারতের নন্দনগরে এক মুসলিম পরিবারের টিকে থাকার সংগ্রাম, সবাই ভয়ে পালিয়েছে
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না