বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় পুরো দেশজুড়ে গত দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টি চলছে। আকাশ ঢেকে আছে কালো মেঘে। কখনো মুষলধারে, কখনো হালকা — এই ধারাবাহিক বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকের মনে প্রশ্ন, কবে থামবে এই অনবরত বৃষ্টি?
লঘুচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ, স্থলভাগে দুর্বলতা
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে। এরপর এটি স্থলভাগে উঠে এসে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে এটি টাঙ্গাইল ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, নিম্নচাপটি উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
সতর্ক সংকেত ও ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস
অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলে ঘণ্টায় ৬০–৮০ কিলোমিটার গতিতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অন্যত্র ৪৫–৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, যার জন্য ১ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অস্থায়ী জলাবদ্ধতা ও ভূমিধসের ঝুঁকি
টানা ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে ইতিমধ্যেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বন্যার পূর্বাভাস ছয় জেলায়
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ফেনী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা জেলায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ফেনীতে মুহুরী নদীর পানি বাড়ছে এবং তা বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। হাওর অঞ্চলভুক্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানিও বাড়তে পারে।
অন্যান্য নদনদীর পরিস্থিতি
সাপ্তাহিক পূর্বাভাস
রোববার পর্যন্ত এই বৃষ্টি পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরপরে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমলেও মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে আগামী সপ্তাহজুড়েই বৃষ্টিপাত চলতে পারে।