সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ের কীর্তি গড়েছেন ইকরামুল হাসান শাকিল। তবে তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন এক অভিনব পদ্ধতিতে — সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শুরু করে পদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে এবং সবচেয়ে কম সময়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করে গড়েছেন এক অনন্য বিশ্বরেকর্ড।
শাকিল কক্সবাজারের ইনানি সমুদ্র সৈকত থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন। টানা ৮৪ দিন পায়ে হেঁটে প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান তিনি। পৃথিবীর আর কোনো পর্বতারোহীর এমন কীর্তি নেই—এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
এই অভিযানটির সমন্বয়কারী ছিলেন বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের (বিএমটিসি) সদস্য সাদিয়া সুলতানা শম্পা। ১৯ মে (সোমবার) তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, শাকিল সফলভাবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করে ক্যাম্প ৪-এ ফিরে এসেছেন। দ্রুততম সময়ে সমুদ্র থেকে পদযাত্রায় যাত্রা শুরু করে তিনি বিশ্বের দীর্ঘতম পথ এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা জয় করেন। যদিও যোগাযোগের সীমাবদ্ধতায় তার আরোহণের সময়, সঙ্গীদের পরিচয় বা ছবি-ভিডিও এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি, তবে অভিযানে যুক্ত নেপালের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এই সাফল্য নিশ্চিত করেছে।
সাদিয়া শম্পা আরও বলেন, আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শাকিলের সম্পূর্ণ নিরাপদে বেসক্যাম্পে ফিরে আসা। তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা বিস্তারিত তথ্য, ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করব। শাকিলের ফেসবুক পেজে আগ্রহীরা নিয়মিত আপডেট পেতে পারেন।
এই কৃতিত্ব নতুন নয় শাকিলের জন্য। এর আগে ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে এভারেস্ট জয় করেছিলেন। শাকিল সেই রেকর্ড ভেঙেছেন—তিনি আরও ১০০ কিলোমিটার বেশি পথ পাড়ি দিয়েছেন এবং সময় নিয়েছেন এক সপ্তাহ কম।
২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইনানি সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান ছিল "সি টু সামিট" নামক এক ব্যতিক্রমধর্মী অভিযান। বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের দুর্গম অঞ্চল পাড়ি দিয়ে শাকিল অবশেষে আরোহণ করেন ২৯,০৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট।
পর্বতারোহণে শাকিলের পথচলা বহুদিনের। ২০১৩ সালে তিনি কলকাতা থেকে হেঁটে ১১ দিনে ঢাকায় পৌঁছেছিলেন। এরপর তিনি বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবে যোগ দেন এবং ভারতে প্রাথমিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৫ সালে তিনি কেয়াজো-রি (২০,২৯০ ফুট) পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন এম এ মুহিতের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বাংলাদেশি দলের অংশ হিসেবে।
ইকরামুল হাসান শাকিলের এই সাফল্য শুধু একটি ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি বাংলাদেশের জন্য গর্বের এক ইতিহাস। তাঁর ‘সি টু সামিট’ অভিযান তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।