ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ টোকিওতে ‘নিক্কেই ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশের ভূমিকাকে আঞ্চলিক সেতুবন্ধ হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঞ্চলিক জোটগুলোর মাধ্যমে পারস্পরিক সহায়তার ভিত্তি গড়ে তোলার।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আসিয়ান (ASEAN)-এর সীমান্তবর্তী দেশ হওয়ায় এই জোটে সদস্যপদ লাভে আগ্রহী এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য অংশীদারিত্ব উন্নয়নের জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তার মতে, সংরক্ষণবাদী নীতির মোকাবিলায় অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য ও টেকসই প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা জরুরি।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বিমসটেক (বঙ্গোপসাগরীয় বহুখাতীয় প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা উদ্যোগ)-এ সক্রিয়ভাবে জড়িত, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশকে নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরাম। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার এ সময়ে এই অঞ্চলের দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে।
তবে তিনি সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) সম্পর্কে হতাশাও প্রকাশ করেন। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি পারস্পরিক চলাচল ও সহযোগিতার ক্ষেত্র গড়ে তোলা। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধ ও অবিশ্বাসের কারণে সার্ক কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন ইউনূস। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিমসটেক, সার্ক ও আসিয়ানের মতো সংস্থাগুলো ভবিষ্যতে ঐক্য ও সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে তুলতে পারবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। আমরা দেশকে আর পুরনো দুর্নীতিগ্রস্ত কাঠামোর হাতে তুলে দিতে চাই না।’ নির্বাচন নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে, তবে সেনাবাহিনী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলায় দেশের ভেতরে চাপ তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোতেও ভিন্নমত আছে।
বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে আয়োজিত এই সম্মেলনে এশিয়ার ভূমিকাকে পুনর্ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হয়। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘একটি অস্থির বিশ্বে এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’। এতে অংশগ্রহণ করেন সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী গান কিম ইয়ং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এবং পলাউয়ের প্রেসিডেন্ট সুরাঙ্গেল হুইপস জুনিয়রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ।