আজ রোববার ১১ জ্যৈষ্ঠ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। ‘সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি’ হিসেবে পরিচিত নজরুলের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে। শোষণ, বঞ্চনা, সাম্প্রদায়িকতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রামী কণ্ঠের প্রতীক হয়ে ওঠা এই কবি আজও প্রাসঙ্গিক।
জন্মদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে সকাল থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করা হয়েছে। ভোর সাড়ে ৬টায় উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় পর্যায়ে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লা ও দৌলতপুরে তিন দিনব্যাপী নজরুলজয়ন্তী পালন শুরু হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য: ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান : কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’।
কুমিল্লায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেবেন নজরুল গবেষক, পরিবারের সদস্য ও গুণী শিল্পীরা। ২৬ মে ঢাকায় জাতীয় নাট্যশালায়ও হবে অনুষ্ঠান।
নজরুল তার জীবন শুরু করেন কঠিন দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। মুয়াজ্জিন থেকে সেনাসদস্য, লেটো গানের শিল্পী থেকে বিশিষ্ট কবি—তার প্রতিটি পরিচয়েই ছিল বিস্ময়কর বৈচিত্র্য। ১৯২২ সালে প্রকাশিত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ তাকে এনে দেয় বিপুল খ্যাতি ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বরের মর্যাদা।
প্রায় চার হাজার গান রচনা করে নজরুল বাংলা গানের জগতে সৃষ্টি করেন নতুন ধারা। প্রথম বাংলা গজল, প্রেমগীতি, ইসলামী সংগীত থেকে শুরু করে সাম্যবাদী ও বিদ্রোহী গানে তিনি রেখে গেছেন গভীর প্রভাব। সাহিত্যে তার গদ্য যেমন ‘কুহেলিকা’, ‘মৃত্যুক্ষুধা’ কিংবা প্রবন্ধ ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রতিবাদ।
সাহিত্য ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও অভিনয়েও যুক্ত ছিলেন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’-তে তিনি অভিনয়ও করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
আজকের দিনে যখন বিশ্বজুড়ে বেড়েছে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য ও বিদ্বেষ, তখন নজরুলের সাহিত্য ও চেতনা হয়ে উঠতে পারে আমাদের জন্য আলোর দিশারি।