সরকারি দামে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাস কিনে তিন হাজারেরও বেশি পরিবেশক ভোক্তাদের কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে মোটা মুনাফা করছেন। অথচ এই গ্যাসের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষকে সহজলভ্য দামে জ্বালানি সরবরাহ করা।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান—পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি—ভোক্তাদের কাছে সরবরাহের জন্য পরিবেশকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস সরবরাহ করে। কিন্তু ১২.৫ কেজি সিলিন্ডার ৮২৫ টাকায় বিক্রির নিয়ম থাকলেও বাজারে তা ১,০০০ থেকে ১,৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিপিসির এক তদন্ত প্রতিবেদনে দামের এই তারতম্য তুলে ধরা হয়েছে।
চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক খুচরা বিক্রেতা অতিরিক্ত দামে গ্যাস বিক্রি করছেন, এমনকি কোথাও কোথাও সরকারি ব্র্যান্ডের গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশকেরা দাবি করছেন, কোম্পানি পর্যায় থেকে পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ার কারণে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
চট্টগ্রামের পরিবেশক শাহ আলম বলেন, “যে পরিমাণ গ্যাস পাই, তা দিয়ে দোকান ভাড়া, পরিবহন খরচ ওঠে না, তাই কিছুটা লাভ রাখতে হয়।” একই মত প্রকাশ করেন আরেক পরিবেশক ফজলু, যিনি বলেন, “কম্পানিগুলো পর্যাপ্ত গ্যাস দেয় না।”
এলপি গ্যাস পরিবেশক সমিতির চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি খোরশেদুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী জানিয়েছেন, সীমিত সরবরাহ এবং ব্যবসায়িক ব্যয় মেটাতে তাঁদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, “বিইআরসি এবং বিপিসি ঠিকভাবে তদারকি না করায় পরিবেশকেরা এই সুযোগ নিচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত মূল্যে গ্রাহকেরা গ্যাস পাচ্ছেন কি না, সেটা নজরদারির আওতায় আনা দরকার।”
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, “বাড়তি দামে বিক্রি এবং সরকারি গ্যাস বেসরকারি সিলিন্ডারে ঢুকিয়ে বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিপিসির ৪ মে তারিখের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশক নিয়োগ ও বিপণন নীতিমালা পুরোনো হয়ে গেছে। এটি হালনাগাদ করা জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি এলপি গ্যাসের মূল্যের ব্যবধান যতদিন থাকবে, ততদিন মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ করার সুযোগ থেকেই যাবে।
একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো—সরকারি ডিপো বা বিক্রয় অফিসের তত্ত্বাবধানে "গ্রাহক কার্ড" ব্যবস্থার মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তার কাছে গ্যাস সরবরাহ করা। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমবে এবং ভোক্তারাও ন্যায্য দামে গ্যাস পাবেন।
বিপিসির তথ্যমতে, বর্তমানে চার কোম্পানির অধীনে নিবন্ধিত পরিবেশকের সংখ্যা ৩,১০১। গত পাঁচ বছরে তারা ৫ কোটি ২২ লাখ কেজি এলপি গ্যাস বিক্রি করেছে। অথচ এই বিপুল পরিমাণ বিক্রির সুবিধা ভোক্তাদের জায়গায় গিয়ে পৌঁছাচ্ছে না, লাভ হচ্ছে শুধু কিছু পরিবেশকের।
সূত্র:প্রথম আলো