জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ও এক সময়ের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায় ঘোষণার জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) দিন ধার্য করেছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই রায় ঘিরে দেশব্যাপী ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও এর রাজনৈতিক-আইনি গুরুত্ব।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রংপুর অঞ্চলে সংঘটিত নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, আটক, গুরুতর জখম, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ মোট নয় ধরনের অপরাধের বিস্তারিত বর্ণনা উঠে আসে। এসব অপরাধের পেছনে সরাসরি নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর তাকে ফাঁসির আদেশ দেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ২ নম্বর, ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর অভিযোগে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন ও ধর্ষণের জন্য ২৫ বছর এবং ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের জন্য ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়।
রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। তবে তাকে ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ১৫ মার্চ। এরপর ওই বছরের ১৯ জুলাই আজহারুল ইসলাম রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন। এই আবেদনটি ২৩ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এবং এতে মোট ১৪টি যুক্তি তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগই ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগের রায়ের আইনি ভিত্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে।
২০২৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজহারকে পূর্ণাঙ্গ আপিল করার অনুমতি দেন। এরপর থেকেই মামলাটি নতুন করে উচ্চ আদালতের বিচারিক পর্যায়ে প্রবেশ করে।
এটি একটি বহুল আলোচিত ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলা হওয়ায় সর্বশেষ শুনানির সময় দেশের আইন অঙ্গন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি ছিল আপিল বিভাগের প্রতি। গত ৮ মে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ২৭ মে দিন নির্ধারণ করেন।
আজহারের পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের জানান, তারা যে যুক্তিগুলো আদালতে উপস্থাপন করেছেন, তাতে তিনি খালাস পাওয়ার দাবি রাখেন। তিনি বলেন, “আমরা আদালতে প্রমাণ করেছি যে, অভিযোগের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি।”
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে এটিএম আজহারের মামলাটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি তখনকার রাজনৈতিক ও সামরিক সহিংসতার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর জড়িত থাকার অভিযোগে অন্যতম কেন্দ্রীয় মুখ। এই মামলার রায় শুধু আইনি নয়, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ারও জন্ম দিতে পারে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে দেশে-বিদেশে যে বিতর্ক ও আলোচনা রয়েছে, তা আবারও নতুন করে সামনে আসতে পারে।
মঙ্গলবারের রায় শুধু একজন ব্যক্তির ভাগ্য নির্ধারণ নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, আইন ও ন্যায়বিচারের ধারাবাহিকতায় একটি বড় অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। আদালতের রায়ের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচারে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের ইতি ঘটতে যাচ্ছে—অথবা, নতুন বিতর্কের সূচনা হতে পারে, সবকিছু নির্ভর করছে আপিল বিভাগের রায়ের ওপর।
সূত্র:কালবেলা
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন বলে বিবিসি আই- এর একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে
গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১০ জুলাই
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনে দ্বিতীয় দিনের শুনানি আজ
আদালত অবমাননার মামলা: শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড