২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে অন্তত ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন বলে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি আই। ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতা হিসেবে উঠে এসেছে। এদিন ছিল টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের শেষ দিন, যেদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
বিবিসি শতাধিক ভিডিও, সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এবং মোবাইল ফোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানায়, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে দুপুর ২টা ৪৩ মিনিট থেকে বিকেল ৩টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত চলা অভিযানে পুলিশের গুলিতে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হন। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ করে গুলি ছোড়ে এবং আহতদের শরীরে লাথিও মারে। নিহতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মিরাজ হোসেন, যিনি নিজের মোবাইলে গুলির প্রথম মুহূর্ত ধারণ করেন এবং পরে নিজেও প্রাণ হারান।
ঘটনার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সন্দেহজনক ভূমিকা উঠে এসেছে। শুরুতে তারা ঘটনাস্থলে থাকলেও, গুলির ঠিক আগে সরে যান। বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
একটি ভাইরাল ভিডিও, যা ৫ আগস্টের গুলির ঘটনা বলে প্রচারিত হচ্ছিল, সেটিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিবিসি। তদন্তে দেখা যায়, এটি আসলে ৪ আগস্ট ধারণ করা হয়েছিল।
অভিযানে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা প্রথমে কমিয়ে প্রকাশ করা হলেও, হাসপাতালের রেকর্ড, পরিবারদের বক্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষণ করে বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে যে, নিহতের সংখ্যা অন্তত ৫২ জন।
এ ঘটনায় থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসানসহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, শেখ হাসিনার একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং—যেটি অনুসন্ধানে যাচাই করেছে ব্রিটিশ অলাভজনক সংস্থা ‘ইয়ারশট’। এতে তাকে স্পষ্টভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার নির্দেশ দিতে শোনা যায়।
এই রেকর্ডিংকে মানবাধিকার আইনজীবীরা ‘তাঁর (শেখ হাসিনার) বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (ICT) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যে ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।