রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাগেরহাট-৪ আসনের মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলায় খায়রুজ্জামান শিপন কাজী নামে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিস্তৃত অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত শিপন কাজী বর্তমানে এই আসনে নিজস্ব বলয় তৈরি করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, এমনকি আওয়ামী লীগপন্থী অনেকেও বর্তমানে তার প্রভাবের আওতায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই তিনি দেশে ফিরে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে থাকেন। মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলার বহু ঘের দখলের অভিযোগ উঠেছে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এসব ঘেরের মালিকরা বলছেন, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের থেকে জোরপূর্বক ঘের লিখে নেওয়া হয়েছে, অর্থ আদায় করা হয়েছে, এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। অনেকে বলছেন, শত শত বিঘা জমির মাছ লুট করে নিয়েছে তার সিন্ডিকেট, যার বাজারমূল্য কোটি টাকার ওপরে। এই অভিযোগ শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—বিভিন্ন অডিও ক্লিপ, কল রেকর্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার ও লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে তা প্রমাণও করা হয়েছে।
সাবেক বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং ঘেরের মালিকরা অভিযোগ করেছেন যে শিপন কাজী শুধু ঘের দখলেই থেমে থাকেননি, বরং আওয়ামী লীগ থেকে আসা একদল নেতাকর্মীকে আশ্রয় দিয়ে বিএনপির ভেতরেই একটি "নব্য বিএনপি" গড়ে তুলেছেন, যারা পুরনো ও ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করে দিয়েছে। যাদের অনেকে ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের সময় বা বিএনপি সংকটে থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা ছিলেন, তারাই এখন নতুন প্রভাবশালী বিএনপি নেতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন শিপনের আশীর্বাদে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শিপন কাজী ও আওয়ামী লীগের এক চেয়ারম্যানের আত্মীয়তা রয়েছে। সেই সুবাদে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সহায়তা সহজেই পাচ্ছেন তিনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে তদন্তের নির্দেশ থাকলেও দলের ভেতর অদৃশ্য প্রভাব ও ‘সুপার পাওয়ারের’ জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির জেলা নেতারাও প্রকাশ্যে বলছেন যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েও কেন্দ্র থেকে সাড়া পাননি। ফলে, অনেক সিনিয়র নেতাও নীরবতা অবলম্বন করছেন।
এছাড়া শিপনের বিরুদ্ধে গ্রিসপ্রবাসী জাহিদ ইসলামের কাছে মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অডিও রেকর্ড প্রকাশ্যে এসেছে। জাহিদ দাবি করছেন, তার সামাজিক কর্মকাণ্ড ও ফাউন্ডেশনের ছবি কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে প্রচার হওয়ায় তাকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জাহিদ দেশে ফিরে মায়ের দোয়া মাহফিলে খাবার দিতে গেলে শিপনের লোকেরা সেটাও নষ্ট করে দিয়েছে।
এমনকি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ১৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে হামলার অভিযোগ রয়েছে শিপন কাজী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে, যা নিয়ে মামলা হয়েছে জেলা জজ আদালতে। শিপনের বিরুদ্ধে এধরনের অডিও ক্লিপও রয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম দাবি করছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শিপন কাজী বলছেন, তিনি কোনো ঘের দখল করেননি বা কারও কাছ থেকে টাকা আদায় করেননি। বরং আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপির ঘের দখল হয়েছিল, তিনি তা উদ্ধার করেছেন মাত্র। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এবং বিএনপির একটি সুবিধাবাদী গ্রুপ তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে বাস্তবতা হলো, অনেক ভুক্তভোগী এখন এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, কেউ কেউ থানায় অভিযোগ দিতেও সাহস পান না। এমনকি দলীয় নেতৃত্বের অভ্যন্তরেও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, অভিযোগ যাচাই-বাছাই চলছে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে শিপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই পুরো চিত্রে স্পষ্ট, বাগেরহাট-৪ আসনে রাজনীতির নামে ব্যক্তিগত বলয় গঠন, দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ঘনীভূত হয়ে উঠেছে। অথচ সঠিক তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় একটি এলাকায় ভয়, নৈরাজ্য ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। প্রশ্ন উঠছে, বিএনপি যদি শিপনের মতো বিতর্কিত নেতার ওপর নির্ভর করে রাজনীতি চালাতে চায়, তাহলে তারা নিজেদের আদর্শ ও সংগঠন কতটা সুরক্ষিত রাখতে পারবে? এবং যদি ক্ষমতার পালাবদল সত্যিই ঘটে থাকে, তবে এই আচরণ ভবিষ্যতের জন্য কতটা গণতান্ত্রিক বা ন্যায্য হবে—এ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে ঘাটতি খুবই ছোট- বাণিজ্য উপদেষ্টা
যারা সংস্কার পিছিয়ে দিতে চায় তারাই নির্বাচন পেছাতে চায়: হাসনাত
সানেম'র জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি ৩৯, জামায়াত ২২, এনসিপি ১৬ ভাগ ভোট পাবে
কুমিল্লা অঞ্চলের ১৬ আসনে খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ