ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৫: দীর্ঘ ২০ মাস পর প্রথমবারের মতো পরিমাপযোগ্য নিট রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিপিএম-৬ হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী এপ্রিল মাসের শেষে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, আর মোট রিজার্ভ হয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রকাশিত পরিসংখ্যানে প্রকাশ পেয়েছে।
গত আগষ্ট মাসে এই স্তর স্পর্শ করেছিল ২৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে, কিন্তু পরের মাসে তা হ্রাস পেয়ে নামিয়ে নিয়ে গিয়েছিল মাত্র ২১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলারে। এরপর অব্যাহত পতনের ধারা সরকারের পতনের পূর্বে জেগেছিল ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে।
এই আশার স্পার্শ এনে দিয়েছে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধि ও অর্থপাচারে নিয়ন্ত্রণ। মার্চ মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ৩২৯ কোটি ডলার, যা একমাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড, এবং রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক বৃদ্ধি রিজার্ভ শক্তিশালী করেছে।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ এখনো রয়ে গেছে ২০২১ সালের আগস্টে, যখন তা দাঁড়িয়েছিল ৪৮ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলারে। তৎকালীন সময়ে উদ্বৃত্ত ঋণ, রপ্তানি আয় ও প্রবল রেমিট্যান্স প্রবাহ এসেছে রেকর্ড স্থাপনে। তবে পরবর্তী মাসগুলোতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, আমদানি ব্যয় ও বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাবের কারণে ধারাবাহিক হ্রাস লক্ষ্য করা যায়।
বর্তমান রিজার্ভ পর্যাপ্ত: মোট রিজার্ভের মধ্যে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়যোগ্য, যা তিন মাসের আমদানি ব্যয় নির্বিঘ্নে মেটাতে সক্ষম বলে অর্থ বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ডলারের চাপ কিছুটা কমেছে এবং আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা আশাপ্রকাশ করছেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবণতা অপরিবর্তিত থাকলে রিজার্ভ আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে তারা সতর্ক করে দিচ্ছেন, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও সুদের হারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে এই অর্জন দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী হয়ে না-ও থাকতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন সহনশীল রাজনৈতিক-আর্থিক নীতিমালা, বৈদেশিক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং রেমিট্যান্স উৎস বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিদেশি মুদ্রার পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ইতোমধ্যে উচ্চ পর্যায়ে নির্দেশনা প্রণয়ন করেছে।