বাংলাদেশ এশিয়ার নবম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) প্রকাশিত ‘২০২৫ বেসিক স্ট্যাটিসটিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) এখন ৪৫০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা ৪৫ হাজার ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের সমান।
এই তালিকায় এশিয়ার ৪৬টি দেশের অর্থনৈতিক তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে সেখানে জাপানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ।
একটি দেশের অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মোট মূল্য সংযোজনের পরিমাণকেই জিডিপি বলা হয়। কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাত এই তিনটি উপখাতের উৎপাদনের ভিত্তিতে জিডিপি নির্ধারিত হয়। তবে বিদেশে কর্মরত নাগরিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না। সেই আয় জিডিপির সঙ্গে যুক্ত হলে তৈরি হয় মোট জাতীয় আয় বা জিএনআই। পরবর্তীতে এই জিএনআইকে জনসংখ্যার মাধ্যমে ভাগ করে মাথাপিছু আয় নির্ধারণ করা হয়।
এডিবির তথ্যমতে, বাংলাদেশের চেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলো হচ্ছে— চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইপে, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন, যার জিডিপির আকার ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত, যার জিডিপি ৩ লাখ ৯১ হাজার ১৪০ কোটি ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপি ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫০ কোটি ডলার। ইন্দোনেশিয়ার জিডিপি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩০ কোটি, তাইপের ৭৯ হাজার ৫৯০ কোটি, থাইল্যান্ডের ৫৪ হাজার ৫০ কোটি, ভিয়েতনামের ৪৭ হাজার ৬৩০ কোটি এবং ফিলিপাইনের জিডিপি ৪৬ হাজার ১৪০ কোটি ডলার।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ অর্থনীতির এই অবস্থানে আসতে পেরেছে মূলত রপ্তানি খাতের দৃঢ়তা, প্রবাসী আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কারণে। তাঁরা বলছেন, সামনে এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে সরকারকে কাঠামোগত সংস্কার, শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, এই অর্জন আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও সম্ভাবনার ওপর নতুন করে আস্থা তৈরি করবে। বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ যেমন বাড়বে, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো আরও দৃঢ় ভিত্তির ওপর এগিয়ে নিতে সুবিধা হবে।
এই উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন সময়, এই সাফল্যকে স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে রূপান্তর করার।