বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখন "ডাকাতদের আড্ডায়" পরিণত হয়েছে—এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, “বহুদিন ধরেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা প্রতারণার শিকার হয়ে তাদের সঞ্চিত পুঁজি হারাচ্ছেন। বাজারে একটি সুপরিকল্পিত, ছন্দময় প্রক্রিয়ায় কারসাজি চলছে, যা কিছু ভেস্টেড ইন্টারেস্ট গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে।”
রবিবার (২৫ মে) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
শফিকুল আলম বলেন, “যারা অতীতে শেয়ারবাজার সংস্কারের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের অনেকেই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বঞ্চিত হয়েছেন, আর মূল সুবিধাভোগী হয়েছেন তথাকথিত বড় খেলোয়াড়রা।”
তিনি উল্লেখ করেন, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক কারসাজির এক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।
“সংস্কারের নামে যত উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তা কার্যকর হয়নি। কারণ, যাদের দায়িত্ব ছিল সংস্কারের, তাদের অনেকে নিজেরাই ওই কারসাজিকৃত গোষ্ঠীর অংশ ছিলেন,”— বলেন শফিকুল।
শেয়ারবাজারকে এই "দুষ্টচক্র" থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজন "বড় ধরনের সংস্কার", এমন মত দিয়ে শফিকুল আলম জানান, সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আন্তর্জাতিক মানের শেয়ারবাজার সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই উদ্দেশ্যে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের একটি টিম গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। তাদেরকে তিন মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শফিকুল বলেন, “এবারের সংস্কার হবে গোষ্ঠীগত স্বার্থের বাইরে গিয়ে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার জন্য। যিনি সংস্কারের দায়িত্বে থাকবেন, তার নির্মোহ এবং প্রভাবমুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “যদি এই সংস্কার সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আবারও জনগণের আস্থা অর্জন করবে এবং অর্থনীতির একটি কার্যকর ও শক্তিশালী খাত হিসেবে গড়ে উঠবে।”