বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর ২০২৫–২০২৭ মেয়াদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে ‘ফোরাম’ জোট। ঢাকায় ২৬টি পরিচালক পদের মধ্যে ফোরাম জয়ী হয়েছে ২৫টি পদে এবং চট্টগ্রামের ৯টি পদের মধ্যে জয়ী হয়েছে ৫টিতে।
সবমিলিয়ে ৩৫টি পরিচালকের মধ্যে ৩০ জনই ফোরামের প্রতিনিধি। বাকি ৫টি পদে জয় পেয়েছেন সম্মিলিত পরিষদ (৪টি) এবং স্বতন্ত্র (১টি) প্রার্থীরা।
আগামী ২ জুন নির্বাচিত পরিচালকরা সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন করবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এবার বিজিএমইএর সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন ফোরাম জোটের প্যানেল লিডার ও রাইজিং ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান (বাবু)।
ভোটগ্রহণ ও ফলাফল
শনিবার (৩১ মে) ঢাকার রেডিসন ব্লু ও চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা
এই নির্বাচনে ৭৬ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।
বিজয়ীদের তালিকা
ঢাকা অঞ্চলের বিজয়ী ফোরাম প্রার্থীরা:
১. মাহমুদ হাসান খান বাবু (১১৪৯)
২. শাহ রাঈদ চৌধুরী (১১২৩)
৩. মিজানুর রহমান (১০৬৬)
৪. এম এ রহিম (১০১৪)
৫. ফয়সাল সামাদ (৯৯২)
৬. ইনামুল হক খান (৯৬৬)
৭. ভিদিয়া অমৃত খান (৯৫৭)
৮. মো. হাসিব উদ্দিন (৯৫১)
৯. রেজওয়ান সেলিম (৯৪১)
১০. মোহাম্মদ আবদুস সালাম (৯৪০)
১১. মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী (৯২৯)
১২. নাফিস-উদ-দৌলা (৯১৯)
১৩. সুমাইয়া ইসলাম (৯০৯)
১৪. ফাহিমা আক্তার (৮৫৩)
১৫. মজুমদার আরিফুর রহমান (৮৫০)
১৬. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী (৮৪৯)
১৭. শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ (৮৪৭)
১৮. কাজী মিজানুর রহমান (৮৪৫)
১৯. জোয়াদ্দার মো. হোসনে কামার আলম (৮৪২)
২০. এ বি এম শামছুদ্দিন (৮৪০)
২১. আসেফ কামাল পাশা (৮৩৬)
২২. ড. রশীদ আহমেদ হোসাইনী (৮২৪)
২৩. ফারুক হাসান (৮১৩)
২৪. রুমানা রশীদ (৮১১)
২৫. মোহাম্মদ সোহেল (৮০৭)
২৬. সামিহা আজিম (৭৯৯)
(উল্লেখ্য: ফারুক হাসান ফোরামের প্রার্থী ছিলেন)
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিজয়ী ফোরাম প্রার্থীরা:
১. সেলিম রহমান (১০৫৮)
২. এম মহিউদ্দিন চৌধুরী (৯৭৯)
৩. সাকিফ আহমেদ সালাম (৯৪৪)
৪. মো. শরীফ উল্লাহ (৯২৭)
৫. মো. রফিক চৌধুরী (৯১৯)
সম্মিলিত পরিষদের বিজয়ী (চট্টগ্রাম):
১. সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর (৯৫০)
২. এস এম আবু তৈয়ব (৮৩৫)
৩. রাকিবুল আলম চৌধুরী (৮৩১)
ফোরাম জোটের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাইজিং ফ্যাশনস লিমিটেডের এমডি মাহমুদ হাসান খান বাবু, আর সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন চৈতি গ্রুপের এমডি আবুল কালাম।নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাহমুদ হাসান খান বলেন:
“ফোরামের ইশতেহারে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো আমরা বাস্তবায়নে কাজ করবো। শিল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট— এটি সমাধানই এখন আমাদের প্রথম লক্ষ্য। পাশাপাশি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, মার্কিন ট্যারিফ ইস্যু, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল এবং এক্সিট প্ল্যান— এসব নিয়েও কাজ করবো।”
তিনি আরও বলেন,
“বিজিএমইএর সৌন্দর্য হলো— নির্বাচনের পর সবাই এক হয়ে কাজ করি। ৭৬ জন প্রার্থীই বিজয়ী। আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। কারণ এই সংগঠন কেবল মালিকদের নয়, এর সঙ্গে দেশের অর্থনীতি জড়িত। পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার বিজিএমইএর নেতৃত্বে যাওয়া ফোরামের ভূমিকা তৈরি পোশাক খাতে কাঠামোগত রূপান্তরের সূচনা করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা, মূল্যস্ফীতি ও নীতি-নির্ভর ঝুঁকির মুখে খাতটি আরও দক্ষ ও আধুনিকীকরণের প্রয়োজন অনুভব করছে। এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রফতানি খাতের টার্নিং পয়েন্ট।