আগামী ১৫–১৭ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনীতির জোট জি-৭-এর বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, কানাডা ও জাপানের সমন্বয়ে গঠিত এই জোটের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে যুক্ত থেকেছে ভারত। ২০১৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু এবারের আয়োজনে একটি ব্যতিক্রম দৃষ্টিগোচর হয়েছে—জি-৭-এর আয়োজক দেশ কানাডা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানায়নি।
এই সিদ্ধান্ত শুধুই প্রটোকলের ব্যত্যয় নয়; বরং ভারত-কানাডা সম্পর্কের টানাপোড়েনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিচ্ছবি বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংসদে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে ভারতের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ আছে। দিল্লি এই অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। এর জের ধরে দুই দেশের মধ্যে দ্রুত কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে—পরস্পরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার, বাণিজ্য আলোচনার স্থগিতকরণ এবং জনসাধারণের স্তরে অবিশ্বাসের বিস্তার ঘটতে থাকে।
কানাডায় সম্প্রতি রাজনৈতিক পালাবদলে মার্ক কার্নি সরকার গঠন করেন। বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন, তার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থার ঘাটতি এবং পারস্পরিক সহনশীলতার সংকট এখনও কাটেনি। জি-৭ সম্মেলনে মোদিকে বাদ দেওয়া সেই অচলাবস্থারই একটি সরব ইঙ্গিত।
জি-৭ থেকে ভারতের অনুপস্থিতি শুধুই একটি সম্মেলন থেকে বাদ পড়া নয়—এটি এক গভীর কূটনৈতিক বার্তা। ভারত বর্তমানে জি-২০ সভাপতিত্ব করেছে, BRICS ও SCO-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। সেই ভারতকে জি-৭-এর মতো জিওপলিটিক্যাল মঞ্চ থেকে দূরে রাখা মানে, পশ্চিমা ব্লকের কিছু অংশের সঙ্গে সম্পর্কের রূপরেখা নতুন করে চিন্তা করা দরকার—এমন বার্তা আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিফলিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, প্রবাসী সম্প্রদায়ের চাপ, এবং মানবাধিকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে এখন বৈদেশিক সম্পর্কগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। ভারত-কানাডা দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে জি-৭ থেকে ভারতের অনুপস্থিতি সেই বাস্তবতাকেই সামনে এনেছে।
এই অনুপস্থিতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে বা ভবিষ্যতে ভারত-পশ্চিম সম্পর্ক কেমন রূপ নেবে, তা নির্ভর করছে উভয় দেশের কূটনৈতিক সদিচ্ছা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ এবং ভূরাজনৈতিক সমঝোতার ওপর। তবে এ মুহূর্তে এটুকু স্পষ্ট যে, বিশ্ব রাজনীতির পরিমণ্ডলে কেবল শক্তি নয়—আস্থা, মর্যাদা ও দায়িত্বশীলতাও একটি দেশের অবস্থান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাল যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক
ইরানের প্রেসিডেন্টের দাবি, ইসরায়েল তাকে ‘হত্যার’ চেষ্টা করেছে
খাদ্যের জন্য মৃত্যুকে উপেক্ষা করে গাজায় ক্ষুধার্ত নারী-পুরুষ-শিশুর লড়াই