রংপুরে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ন্যাশনাল কনসেন্সাস পার্টি (এনসিপি)-এর মধ্যে চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রীতিমতো সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। সেনপাড়ায় জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনার পর এবার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে মহানগর কোতোয়ালি থানা।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে রংপুর শহরের সেনপাড়ায় অবস্থিত জাপা চেয়ারম্যানের বাসভবন ‘দ্য স্কাই ভিউ’ এ ভাঙচুর, হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা বাড়িতে রাখা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
পরদিন শুক্রবার রাতে জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ আলীর নেতৃত্বে জাপার পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেলে, থানা মামলা রেকর্ড না করে অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। পুলিশের বক্তব্য ছিল—তদন্তের পর মামলা রেকর্ড করা হবে।
মামলা রেকর্ড না করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় জাপা। দলের কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা শনিবার থানাকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। তিনি বলেন, “এটি জাপার চেয়ারম্যানের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা, অথচ প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।”
চাপে পড়ে অবশেষে রোববার রাতে জাপার মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। ওই মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে, শনিবার জাপার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করতে থানায় হাজির হন এনসিপির রংপুর সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন। অভিযোগে বলা হয়, “জিএম কাদেরের নির্দেশে তার সমর্থকরা শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালায়। এতে আমাদের চারজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।” এ মামলায় জিএম কাদের, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়, সঙ্গে অজ্ঞাত আরও ৮০-৯০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মহানগর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান জানান, “জাতীয় পার্টি ও এনসিপি নেতাদের করা দুটি মামলাই রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, জাপার নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ ও দলীয় ঐক্য নিয়ে অভ্যন্তরীণ চাপ এবং এনসিপির উঠতি সক্রিয়তা—দুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব গভীরতর হয়েছে। এনসিপি নিজেকে একটি ‘নতুন রাজনৈতিক চেতনার বাহক’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, আর জাপা সেটাকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে প্রতিপন্ন করছে।
একইসঙ্গে, পুলিশের প্রাথমিক অনীহা এবং পরে রাজনৈতিক চাপে মামলা রেকর্ড করাকে অনেকে প্রশাসনের “দ্বৈত আচরণ ও রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতিফলন” হিসেবেও দেখছেন।
রংপুরের এই ঘটনা নিছক দুটি দলের মধ্যে হাতাহাতির চেয়েও গভীরতর রাজনৈতিক ইঙ্গিত বহন করছে। ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর মধ্যে স্থান ও প্রভাব বিস্তারের লড়াই এখনো বিরতিহীনভাবে চলমান। স্থানীয় পর্যায়ে এ ধরনের সহিংসতা ও মামলার রাজনীতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে তা আগামী নির্বাচনের আগে বড় ধরনের অস্থিরতার ইঙ্গিত দিতে পারে।
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন বলে বিবিসি আই- এর একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে
গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১০ জুলাই
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনে দ্বিতীয় দিনের শুনানি আজ
আদালত অবমাননার মামলা: শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড