বর্তমানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাভাবিক নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পতনের পেছনে কোনো সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক বা মৌলিক কারণ না থাকলেও, বাজারে প্রতিনিয়ত সূচকের পতন লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে ব্যাপক হতাশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নিজেদের কষ্টার্জিত পুঁজি হারিয়ে আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
বাজার বিশ্লেষক ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এই অস্বাভাবিক বাজারচিত্রের পেছনে কিছু অসাধু গোষ্ঠীর কৌশলী কারসাজি রয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেলিংয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে—অর্থাৎ, আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, শেয়ারগুলো কম দামে কিনে নেওয়া এবং পরবর্তীতে বড় মুনাফা অর্জন করা।
এই গোষ্ঠী বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এমন অবস্থায় এনে ফেলছে যাতে তারা মনে করেন বাজার আর ঘুরে দাঁড়াবে না। ফলে তারা বিনিয়োগ তুলে নিতে শুরু করেন। তবে বাস্তবতা হলো, এই ধরণের পরিস্থিতি অনেক সময় কৃত্রিম এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়। বাজারের প্রকৃত মৌলিক চিত্র সবসময় এতটা নেতিবাচক নয় যতটা দেখানো হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কিছু গেম্বলার বা জুয়াড়ী প্রকৃতির বিনিয়োগকারী দীর্ঘদিন ধরে বাজারে নানা রকম গেম খেলছে। তারা বাজারকে চক্রাকারে প্রভাবিত করে নিজের লাভের জন্য চেষ্টা করছে, আর এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। কারণ তারা অজ্ঞতার কারণে এবং আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নেন।
তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ পরামর্শ হলো—এই গেম্বলারদের ফাঁদে পা না দিয়ে ধৈর্য সহকারে বিনিয়োগ ধরে রাখা। দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাজার বিশ্লেষণ করা এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতাদের মতামত নেওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, শেয়ারবাজার একটি সময়ভিত্তিক খেলা নয়, এটি ধৈর্য ও কৌশলের জায়গা।
এই গেম্বলারদের মূল লক্ষ্যই হলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নাজেহাল করে নিজের লাভের সুযোগ পাওয়া। যদি সবাই আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগ তুলে নেয়, তাহলে তারা সেই সুযোগ কাজে লাগাবে। কিন্তু যদি আমরা ধৈর্য ধরতে পারি, তাহলে তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না এবং বাধ্য হয়ে বাজার থেকে সরে দাঁড়াবে।
শেয়ারবাজার একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যেখানে বাজার চক্রাকারে চলে—পতনের পর উত্তরণ আসেই। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের উচিত, আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া। গুজবে কান না দিয়ে, মৌলভিত্তিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ ধরে রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। শেয়ারবাজার গেম্বলিংয়ের জায়গা নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি মূল্য সৃষ্টির ক্ষেত্র। একসময় এই অসাধু গোষ্ঠী বাজার থেকে দূরে সরে যাবে, এবং তখন প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন।
সংগৃহিত প্রতিবেদন