শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
এই বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার পাশাপাশি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানায় বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে খন্দকার মোশাররফ হোসেন লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, যার একটি অনুলিপি টিবিএস সংগ্রহ করেছে।
লিখিত বক্তব্যে বিএনপি জানায়, প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে ফুটে ওঠে। সেই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয় এবং জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে।
তবে আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা ও জনমনে থাকা প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ হয়েছে, সে প্রশ্ন এখন ঘনীভূত। সরকারে নিরপেক্ষতার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি জানায়, জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। অথচ একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য এই ঐক্যই ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি হওয়া উচিত।
বিএনপির অভিযোগ, সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ড জনগণের মধ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর সংক্রান্ত নীতিগত পদক্ষেপগুলোতে জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে দলটি। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণে আইনগত ও নৈতিকভাবে সক্ষম নয়।
বিএনপি মনে করে, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দেয়া উচিত। বিশেষত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তাতে করে সরকারের নিরপেক্ষতা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের গঠন ও ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করে বিএনপি। দলটির দাবি, আইনানুযায়ী সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন হলেও একটি মহল তা পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এছাড়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইশরাক হোসেনকে দ্রুত শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা না করাকে বিএনপি আইনের শাসনের প্রতি সরকারের অবহেলা হিসেবে চিহ্নিত করছে।
সরকারের কিছু উপদেষ্টার নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। তাদের মতে, এ ধরনের ব্যক্তিদের উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হলে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয় এবং জনগণের আস্থাও দুর্বল হয়।
বিএনপি বলছে, সরকার নির্বাচনের বিষয়ে জনআকাঙ্ক্ষাকে যথার্থ গুরুত্ব না দিয়ে চাপে পড়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা একটি অস্থির সংস্কৃতি তৈরি করেছে। সরকারের মর্যাদা ও সক্ষমতা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দলটির অভিমত।
সবশেষে বিএনপি স্পষ্ট করে জানায়, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে অবিলম্বে একটি রোডম্যাপ ঘোষণার প্রয়োজন রয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা বিএনপির পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।
বিএনপি মনে করে, সংস্কার ও নির্বাচন দুটি প্রক্রিয়া একইসঙ্গে চলতে পারে। একইসঙ্গে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত হওয়া ফ্যাসিবাদী শক্তি ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের প্রক্রিয়াও অব্যাহত রাখতে হবে।
বক্তব্যের শেষাংশে দলটি দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি এবং জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের কাছ থেকে আরও কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে।
সূত্র: টিবিএস
যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে ঘাটতি খুবই ছোট- বাণিজ্য উপদেষ্টা
যারা সংস্কার পিছিয়ে দিতে চায় তারাই নির্বাচন পেছাতে চায়: হাসনাত
সানেম'র জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি ৩৯, জামায়াত ২২, এনসিপি ১৬ ভাগ ভোট পাবে
কুমিল্লা অঞ্চলের ১৬ আসনে খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ