গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে মুখ খুললেন। ভারতীয় দৈনিক ‘দ্য ওয়াল’-এর নির্বাহী সম্পাদক অমল সরকারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যা ছিল একই সঙ্গে নাটকীয়, আবেগপূর্ণ এবং রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
সেদিন তিনি নিজ সংসদীয় এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী এক বাসায় আশ্রয় নেন। তবে সেখানেও হামলা হয়। মিছিল ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়, এবং পরিস্থিতি এমন হয় যে তিনি নিজের প্রাণ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরবর্তী ঘটনায় তিনি তার স্ত্রীসহ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা একটি বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ওই বাসায় ঢুকে পড়ে, ভাঙচুর করে এবং শেষ পর্যন্ত বাথরুমের ভেতর ঢুকেই তাঁকে পায়। কাদেরের ভাষ্যমতে, সেই ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে সেনাবাহিনীর কাছে কিংবা জনতার হাতে তুলে দেওয়ার কথা বললেও, কেউ কেউ তাঁকে চিনে ফেলে এবং আচমকাই আচরণে নরম হয়ে পড়ে। তারা তাঁর সঙ্গে সেলফিও তোলে এবং পরে তাঁকে নিরাপদে একটি অটোতে উঠিয়ে এলাকা ছাড়িয়ে দেয়।
এই সাক্ষাৎকারে ওবায়দুল কাদের ছাত্র-অভ্যুত্থানকে ‘লুটপাটের অভ্যুত্থান’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এটি রাজনৈতিক আন্দোলনের চেয়ে ছিন্নমূল ও অপরিকল্পিত একটি আক্রোশে পরিণত হয়েছিল, যেখানে সংগঠিত নেতৃত্বের চেয়ে জনতার তাৎক্ষণিক ক্ষোভই বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে এই ভাষ্য আন্দোলনকারীদের দাবি—যে এটি ছিল একটি গণতান্ত্রিক দাবি ও শাসনবিরোধী প্রতিরোধ—তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সাক্ষাৎকারে কাদের আরও জানান, পতনের পর তিনি প্রায় তিন মাস বাংলাদেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। বিভিন্ন শিল্প ও শ্রমিকক্ষেত্রে অসন্তোষ নজরে রেখে রাজনৈতিক পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছিলেন, যদিও পরে তা সফল হয়নি। মামলা, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং রাজনৈতিক পরিণতির আশঙ্কায় দেশত্যাগ করেন।
তিনি স্মৃতিচারণ করেছেন ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কলকাতায় তাঁর আত্মগোপনের সময়ের কথাও, যা বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে এক অনুরণন তৈরি করে। কাদের এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, যারা তাকে সেদিন সহায়তা করেছিল তারা আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। এই মন্তব্য অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি স্পষ্ট করে দেয় দল ও জনতার মাঝে কতটা দুরত্ব তৈরি হয়েছিল।
এই সাক্ষাৎকার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারে—একদিকে একজন শীর্ষ নেতার মানবিক সংকট, অন্যদিকে রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলীয় শূন্যতা ও বিচ্ছিন্নতা। জনতা ও নেতৃত্বের মধ্যকার সম্পর্ক যে কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তা ওবায়দুল কাদের নিজেই ভাষায় প্রকাশ করেছেন। আন্দোলনের সময়কার ছাত্রদের আচরণ, চেহারা, চিন্তা এবং মনস্তত্ত্ব—সবকিছু যেন তার কাছে ছিল একইসঙ্গে আতঙ্কজনক ও অবিশ্বাস্যরকম দ্বিধান্বিত। তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সাক্ষ্য এক রাজনৈতিক যুগের পতনের নীরব অথচ জ্বলন্ত দলিল হয়ে রইল।
যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে ঘাটতি খুবই ছোট- বাণিজ্য উপদেষ্টা
যারা সংস্কার পিছিয়ে দিতে চায় তারাই নির্বাচন পেছাতে চায়: হাসনাত
সানেম'র জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি ৩৯, জামায়াত ২২, এনসিপি ১৬ ভাগ ভোট পাবে
কুমিল্লা অঞ্চলের ১৬ আসনে খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ