ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হলেও এই সংঘাতের ঢেউ এখন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে আন্দোলিত করছে। পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিশ্লেষক হামিদ মীর সতর্ক করেছেন—একটি নতুন, আরও বিপজ্জনক যুদ্ধের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে, যার কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে পাকিস্তান।
হামিদ মীর তার সাম্প্রতিক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে ইঙ্গিত করেছেন, ইসরায়েল ও ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত সামরিক পরিকল্পনার পথে এগোচ্ছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে টার্গেট করে ইসরায়েলের প্রাক্তন উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী মেইর মাসরির খোলা হুমকি এবং ভারতের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে “অপারেশন সিন্দুর” নামের প্রচারণা—সব কিছু মিলে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, ২০২৫ সালের মে মাসে পাকিস্তান কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করায় দিল্লি ও তেলআবিব ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। এর পরপরই ভারত-ইসরায়েল গোপনে বড় পরিসরে অস্ত্র ও ড্রোন সংগ্রহ ও যৌথভাবে উৎপাদনের কাজ শুরু করে। ভারতের আদানি গ্রুপ এবং ইসরায়েলের এলবিট সিস্টেম যৌথভাবে ড্রোন উৎপাদনে যেমন এগিয়েছে, তেমনি নতুন মিসাইল প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সহযোগিতা আরও গভীর হয়েছে।
পাকিস্তান–ইরান সম্পর্কের বর্তমান ঘনিষ্ঠতা, বিশেষ করে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধকালে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ইরানকে প্রকাশ্য সমর্থন—এটিও একটি গঠনমূলক ফ্যাক্টর হিসেবে উভয় রাষ্ট্রের উদ্বেগে যুক্ত হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, কাশ্মীরকে দ্বিতীয় গাজা বানানোর চেষ্টা এ অঞ্চলে একটি অভূতপূর্ব ত্রিমাত্রিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে—যেখানে ইসরায়েল, ভারত এবং পাকিস্তান সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে।
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটও এই উত্তেজনার জ্বালানি জোগাচ্ছে। হামিদ মীরের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৫ সালের অক্টোবরের বিহার রাজ্য নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 'জয়' দেখাতে চান। সে লক্ষ্যেই কূটনৈতিক ও সামরিক সব দিক থেকে চাপ সৃষ্টির কৌশল নেয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—পাকিস্তান, বিশেষত তার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা, ভারত-ইসরায়েলের এই যৌথ কৌশলগত প্রচেষ্টা কীভাবে মোকাবিলা করবে? আর কাশ্মীরকে যদি সত্যিই একটি “গাজা” বানানোর চেষ্টা হয়, তবে পাকিস্তান তা সামরিকভাবে প্রতিহত করতে প্রস্তুত কি না—সেটাই এখন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দু।
পরিশেষে, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের রেশে দক্ষিণ এশিয়ার দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী—ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি নতুন যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই বাস্তবতা হয়ে উঠছে। আর সেটি শুধু পারমাণবিক সক্ষমতা নয়, পুরো অঞ্চলজুড়ে মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাল যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক
ইরানের প্রেসিডেন্টের দাবি, ইসরায়েল তাকে ‘হত্যার’ চেষ্টা করেছে
খাদ্যের জন্য মৃত্যুকে উপেক্ষা করে গাজায় ক্ষুধার্ত নারী-পুরুষ-শিশুর লড়াই