ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ৩ হাজারেরও বেশি চিকিৎসা সরঞ্জামবাহী ট্রাক প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরাইল। এর ফলে ইতিমধ্যে বিপর্যস্ত মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. মুনির আল-বুরশ।
রোববার (১ জুন) তুরস্কভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এক বিবৃতিতে ড. বুরশ জানান, মিশরের আরিশ শহর থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী হাজার হাজার ট্রাক গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে, কিন্তু ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ সেই সব ট্রাক আটকে রেখেছে। তিনি বলেন,
“এই নিষেধাজ্ঞা সংক্রামক রোগ ও মহামারি ছড়াতে ভূমিকা রাখছে। ওষুধ ও ভ্যাকসিন প্রবেশে বাধা দেওয়ায় মানুষের জীবন চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।”
তিনি আরও জানান, পানি নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে, যার ফলে গাজায় ডায়রিয়া, মেনিনজাইটিসসহ বিভিন্ন রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ইসরায়েলের নতুনভাবে প্রবর্তিত সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থাকে বুরশ ‘গণহত্যা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির হাতিয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস জানায়, গত ২৭ মে থেকে সীমিত পরিসরে সহায়তা নিতে আসা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় “মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ” দেখা দিয়েছে। ৯০ দিনের বেশি সময় ধরে সীমান্ত বন্ধ থাকায় ২৪ লাখ গাজাবাসী চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় একের পর এক ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রায় দেড় বছরের এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৪,৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের উল্লেখযোগ্য অংশ নারী ও শিশু।
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করেছে যে, গাজায় এখন দুর্ভিক্ষ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সংকটে উপত্যকাটিতে মানবসভ্যতার অন্যতম ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
একইসঙ্গে, হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (ICJ) ইসরায়েল গণহত্যার মামলার সম্মুখীন হয়েছে, যেখানে গাজার বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলা ও অবরোধকে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাল যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক
ইরানের প্রেসিডেন্টের দাবি, ইসরায়েল তাকে ‘হত্যার’ চেষ্টা করেছে
খাদ্যের জন্য মৃত্যুকে উপেক্ষা করে গাজায় ক্ষুধার্ত নারী-পুরুষ-শিশুর লড়াই