বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছে এবং দেশের সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, জাতীয় সংসদের এবং রাষ্ট্রপতির মেয়াদ অপরিবর্তিত রাখা উচিত, এবং তারা দেশের সাংবিধানিক কাঠামো নিয়ে কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর এবং রাষ্ট্রপতির মেয়াদও পাঁচ বছর হওয়া উচিত, যা বর্তমান কমিশনের চার বছরের প্রস্তাবের বিপরীতে তাদের অবস্থান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের বলেন, "আমরা মনে করি, দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্য সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর থাকা উচিত। আমাদের দল এই সংস্কারের পক্ষে, কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও স্থিতিশীলতা দেশকে আরো উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে।" জামায়াত নেতা আরও বলেন, তারা জাতীয় স্বার্থে এবং জনগণের কল্যাণে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে এবং এই সংস্কারগুলি দেশের জন্য উপকারী হবে।
এছাড়া, জামায়াতে ইসলামী দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছে। তবে তারা এই সংসদের কাঠামো এবং কার্যক্রম নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে চায়। জামায়াত জানায়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার মাধ্যমে সংসদের কার্যক্রম আরও সুসংগঠিত ও কার্যকর হবে।
এদিকে, জামায়াতের নেতা বলেন, "আমরা রাজনৈতিক দল বা একাধিক ব্যক্তি নিয়ে কোনো বিতর্কে লিপ্ত হতে চাই না। আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ, দেশের জনগণ এবং দেশের ভবিষ্যতের উন্নয়ন। আমাদের কাজ হল একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠন করা।"
জামায়াতের নেতারা আরও বলেন, তারা এই আলোচনায় যোগ দিয়ে একাধিক সংস্কারের সুপারিশ গ্রহণে উৎসাহিত। তাদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব সংস্কার দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক হবে। জামায়াতের এই অবস্থান দেশে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবেশ এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ভবিষ্যত গড়তে সাহায্য করবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতিমধ্যে বিএনপি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ মোট ১৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে। কমিশন এই আলোচনার মাধ্যমে সাংবিধানিক, জনপ্রশাসন, নির্বাচনী, বিচার বিভাগীয় এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল সুপারিশ প্রস্তুত করেছে।
এছাড়া, কমিশন জানিয়েছে, তারা ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে তাদের সুপারিশের উপর মতামত চেয়ে স্প্রেডশিট পাঠিয়েছে এবং ৩৪টি দল ইতিমধ্যে তাদের মতামত জানিয়েছে। এখন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে একটি ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, যাতে তারা একটি সমন্বিত জাতীয় অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।
এই কমিশনের লক্ষ্য আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানো, যা দেশের রাজনৈতিক কাঠামো এবং প্রশাসনিক সংস্কারের দিকে অগ্রসর করবে।
সূত্র:নয়াদিগন্ত
বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির দৌড়ঝাঁপ, নতুন জোটের সমীকরণ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি, নেতৃত্বে ডা. তাহের
ফ্যাসিবাদ নিরসনে জামায়াতের ভূমিকা দেশ ও জাতি মনে রাখবে: আলী রিয়াজ
‘সক্ষমতা প্রমাণে আগে স্থানীয় নির্বাচন দিন’—জামায়াত আমিরের আহ্বান
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না