স্থানীয় সরকার নির্বাচন দ্রুত আয়োজন করে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা প্রমাণ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “নির্বাচনে কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হলে জনগণ তা মেনে নেবে না।” একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দেন।
শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে ময়মনসিংহ মহানগর ও জেলা জামায়াত আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সম্মেলনে ময়মনসিংহ বিভাগজুড়ে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন মহানগর জামায়াতের আমির কামরুল আহসান এমরুল।
নারীনীতির নামে সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, “সংস্কারের নামে কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী কিছু সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এই দেশের সাড়ে ৯ কোটি মা-বোনের প্রতিনিধিত্ব করে না। যারা এই সুপারিশ দিয়েছেন তারা সমাজকে যে জায়গায় নিয়ে যেতে চান, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি বলেন, “আমরা জনগণের কল্যাণের পক্ষে দেওয়া সুপারিশ মেনে নেব, কিন্তু কোনো দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে দেওয়া কোনো সুপারিশ মেনে নেওয়া হবে না।”
তিনি বলেন, “এই দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছে সরকার, তাদের সহযোগী গোষ্ঠী এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। যা দেশের বার্ষিক বাজেটের চার থেকে পাঁচ গুণ। জনগণের এই অর্থ পুনরুদ্ধারে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা প্রয়োজন।”
এ সময় তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ধর্ম ও দলের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য থাকবে না। যেখানে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে।” তিনি বলেন, “আমরা একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই রাষ্ট্র হতে হবে আল্লাহর বিধানভিত্তিক, আল কোরআনের নীতিমালাভিত্তিক।”
গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যারা জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় লিপ্ত ছিল, তাদের কাউকে আইনের বাইরে রাখা যাবে না। তাদের বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। গত দেড় দশকে দেশে যে জঞ্জাল সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে হবে। কালো টাকা ও পেশিশক্তির রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) ভিত্তিক ভোটব্যবস্থা চালু করা জরুরি।”
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ, মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, বিভাগীয় পরিচালক ড. সামিউল হক, জেলা আমির আব্দুল করিম, মহানগর নায়েবে আমির আসাদুজ্জামান সোহেল, জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, কিশোরগঞ্জ জেলা আমির অধ্যাপক রমজান আলী, নেত্রকোনা জেলা আমির অধ্যাপক সাদেক আহমেদ হারিছ, জামালপুর জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবদুল আওয়াল, ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, মহানগর ছাত্র শিবির সভাপতি শরিফুল ইসলাম খালিদ, জেলা শিবির সভাপতি এমদাদুল ইসলাম, গণঅভ্যুত্থানে নিহত ছাত্র রিদওয়ান হোসেন সাগরের পিতা আসাদুজ্জামান আসাদ, শহীদ মাহিনের পিতা জামিল হোসেন সোহেলসহ বিভিন্ন উপজেলা ও সাংগঠনিক থানার নেতৃবৃন্দ।
জামায়াত আমির কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আসুন, আমরা ঘরে ঘরে সত্য ও ন্যায়ের বার্তা পৌঁছে দিই। নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ি, পরিবার ও সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করি। সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন বাংলাদেশ গড়ি।”
সূত্র:কালবেলা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি, নেতৃত্বে ডা. তাহের
ফ্যাসিবাদ নিরসনে জামায়াতের ভূমিকা দেশ ও জাতি মনে রাখবে: আলী রিয়াজ
“আমাদের এজেন্ডা কুরআন-সুন্নাহর সমাজ কায়েম”— জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান
রাজনীতিতে সরব ইলিয়াস কাঞ্চন, নতুন দল নিয়ে আলোচনায়
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না