রাজনৈতিক স্বাধিকার ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত হলো ‘জুলাই ঐক্য’ প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে এক বর্ণাঢ্য ও উত্তেজনাপূর্ণ সমাবেশ।
সমাবেশে অংশ নেয় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মভিত্তিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মূল দাবি— বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা।
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত শাহবাগ
বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা “দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা”, “আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে”, “ভারতের দালাল হুঁশিয়ার” ইত্যাদি স্লোগানে শাহবাগ মোড় প্রকম্পিত করে তোলে।
প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে কয়েক শতাধিক মানুষ, বিশেষত তরুণ ছাত্র, ধর্মপ্রাণ যুবক, নারী ও সামাজিক আন্দোলনের কর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
জাতীয় ঐক্যের ডাক ও জুলাই অভ্যুত্থানকে ঘিরে দ্বন্দ্ব
বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন,
“জুলাই অভ্যুত্থান কাউকে কুক্ষিগত করতে দেওয়া যাবে না। এই গণঅভ্যুত্থান ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ফল। যারা একে নিজেদের সম্পত্তি বানাতে চায়, তারা ‘জুলাইয়ের গাদ্দার’। জাতীয় ঐক্যের পথে July ঐক্যকে অবিকৃত রাখতে হবে।”
তার বক্তব্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিরোধের নামে নেতৃত্ব দখলের চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং বৃহত্তর ঐক্যের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
আহত-শহীদদের তালিকা ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ
জাতীয় নাগরিক পার্টির ডা. জাহিদুল বারী অভিযোগ করেন,
“জুলাই অভ্যুত্থানের প্রায় দশ মাস পরেও শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরকার প্রকাশ করতে পারেনি। চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ব্যর্থতা।”
তার বক্তব্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের দাবি ও শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের আহ্বান ছিল স্পষ্ট।
ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইমরান হোসাইন নূর বলেন,
“জুলাই অভ্যুত্থান ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী ছিল। অথচ আজ উপদেষ্টা পরিষদে ভারতের প্রতি অনুগতরা জায়গা করে নিচ্ছে। আমরা তাদের হুঁশিয়ার করছি— জুলাই যোদ্ধারা কোনো গোলামিকে সহ্য করবে না।”
তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে জাতীয় আত্মমর্যাদাবোধের জোরালো প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়।
জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি নিয়ে ক্ষোভ
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের আবু সাদিক কায়েম অভিযোগ করেন,
“আমরা ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু এখন কিছু ‘জুলাই ঠিকাদার’ সেই স্বপ্ন বিকিয়ে দিয়েছে। তারা আলেম-ওলামা, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করেছে, ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে।”
তার বক্তব্যে অভ্যুত্থানের ধারকদের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ইঙ্গিত ছিল সুস্পষ্ট।
বিদেশি হস্তক্ষেপ ও আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে হুঁশিয়ারি
‘জুলাই ঐক্য’র সংগঠক এবি জুবায়ের বলেন,
“আবার আন্দোলনে নামতে হলে, তাও হবে। ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দিতে এবং আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুত।”
আরেক সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ সরাসরি হুঁশিয়ার করে বলেন,
“বাংলাদেশ কারো উপনিবেশ নয়। আমরা বিদেশি হস্তক্ষেপ মানি না। আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না।”
বিশ্লেষণ: বিকেন্দ্রীকরণ নাকি বিভক্তি?
এই সমাবেশ বাংলাদেশে স্বাধীনতাপরবর্তী সর্ববৃহৎ ফ্যাসিবাদবিরোধী অভ্যুত্থান ‘জুলাই আন্দোলন’-এর উত্তর রাজনীতিতে বিতর্ক, দায়বদ্ধতা ও নেতৃত্বের প্রশ্নকে সামনে এনে দিয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’-এর ভূমিকা, ভারতীয় প্রভাব, শহীদদের দায় ও জাতীয় ঐক্যের রূপরেখা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ‘জুলাই অভ্যুত্থান’কে ঘিরে গঠিত অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও বহুমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়, তবে এতে নতুন এক বিভাজনের সূচনা ঘটবে।
সূত্র:আমার দেশ
যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে ঘাটতি খুবই ছোট- বাণিজ্য উপদেষ্টা
যারা সংস্কার পিছিয়ে দিতে চায় তারাই নির্বাচন পেছাতে চায়: হাসনাত
সানেম'র জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি ৩৯, জামায়াত ২২, এনসিপি ১৬ ভাগ ভোট পাবে
কুমিল্লা অঞ্চলের ১৬ আসনে খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ