সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দাবি করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। গতকাল রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান। সমাবেশে ১০টি রাজনৈতিক দল এবং কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এবং একই দাবিতে সংহতি প্রকাশ করেন। সকাল থেকেই দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
বক্তব্যে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ছাড়া দেশে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং ন্যায়ভিত্তিক রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানকে তিনি জনমতের পরিপন্থী উল্লেখ করে বলেন, এই সংবিধান মেনেই দেশে স্বৈরশাসনের জন্ম হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের ভিত্তি সংস্কার, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই অবস্থা থেকে মুক্তি নেই।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-অভ্যুত্থান ছিল শুধুমাত্র ক্ষমতার রদবদল নয়, বরং একটি নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের শুরুর সূচনা। এ আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে হবে। গণহত্যা, গুম, লুটপাটের দায়ে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি পিআর পদ্ধতিকে ‘জনগণের যৌক্তিক ও যুগোপযোগী দাবি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, যে দল যত ভোট পাবে, সংসদে তার তত আসন থাকতে হবে—এই ন্যায্য ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে। প্রয়োজনে জনগণের রায় জানতে গণভোট আয়োজনের কথাও বলেন তিনি। তিনি বলেন, ইসলামপন্থি ও দেশপ্রেমিক দলগুলো একত্র হলে এক বাক্সে ভোটের মাধ্যমেই ইসলামী আদর্শ ভিত্তিক শক্তি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই বিপ্লবের ফসল। এই সরকার যেন সংস্কার ও নিরপেক্ষতার পথ থেকে বিচ্যুত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে তিনি বলেন, সমৃদ্ধ, ব্যবসাবান্ধব এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনে একটি কার্যকর ও দক্ষ প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। নারী সমাজের প্রতি সম্মান এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দেশ গঠনে তাদের অবদানকে গুরুত্ব দিতে হবে। তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভোট দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের জন্য ইসলামপন্থি নেতৃত্বকে সুযোগ দিতে হবে। ৫ আগস্টের পর ইসলামের পক্ষে যে গণআন্দোলন তৈরি হয়েছে, তা যেন স্থায়ী রূপ পায়, সেজন্য সকলকে ঘরে ঘরে গিয়ে দাওয়াতি কাজ করতে হবে।
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে—জনগণ এখন পিআর ভিত্তিক নির্বাচনই চায়। তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। জুলাই সনদ ৫ আগস্টের পূর্বেই বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, সংস্কার কমিশনকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, মাত্র ২-১টি দলকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। জীবদ্দশায় কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না—এ দাবিও তোলেন তিনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে আয়োজনেরও দাবি জানান।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা বলেন, পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষে প্রায় সব দলের ঐক্যমত রয়েছে, কিন্তু একটি দলের আপত্তিতে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সারজিস আলম বলেন, শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে বিদেশি এজেন্টদের জায়গা দেয়া হবে না।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম বলেন, জাতীয় সরকার গঠনের জন্য পিআর পদ্ধতির নির্বাচনই সবচেয়ে যৌক্তিক পথ। বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সরকার চাইলে তারাও যেন এই প্রস্তাবে একমত হয়।
এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সংবিধান পরিবর্তন ও মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন চায়—পুরনো সিস্টেমে আর কিছু হবে না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হিন্দু মহাজোট, বৌদ্ধ সংগঠন এবং খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান ১৬ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
সমাবেশ ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট ও জনসমাগমের সৃষ্টি হয়। দুপুরের আগেই সমাবেশস্থল পূর্ণ হয়ে যায় এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে ঘাটতি খুবই ছোট- বাণিজ্য উপদেষ্টা
যারা সংস্কার পিছিয়ে দিতে চায় তারাই নির্বাচন পেছাতে চায়: হাসনাত
সানেম'র জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি ৩৯, জামায়াত ২২, এনসিপি ১৬ ভাগ ভোট পাবে
কুমিল্লা অঞ্চলের ১৬ আসনে খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ