বাংলাদেশ আজ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চিত্র দেখা যায়, তা পাশ্ববর্তী অনেক দেশেও খুঁজে পাওয়া যায় না।
রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং নৈতিক শিক্ষার প্রসারে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক ঢাকা জেলা কর্মশালা-২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পথে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে। কখনও মন্দিরে হামলা হয়, আবার কখনও মাজারে ভাঙচুর চালানো হয়। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে দেশে বহু মন্দির ও মাজারে হামলা হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে এই হামলাগুলো যতটা না সাম্প্রদায়িক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলেও নানা প্রোপাগান্ডার জন্ম দেয়।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করে। দেশের স্বাধীনতা ও অগ্রগতির প্রতিটি ধাপে সব ধর্মের মানুষের অবদান রয়েছে। শিষ্টাচার গঠনে ধর্মীয় শিক্ষা ও পারিবারিক মূল্যবোধের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন পারিবারিক ঐতিহ্যের সঙ্গে ধর্মের মর্মবাণী মিলিত হয়, তখন সমাজে একটি মানবিক, শালীন ও নৈতিক পরিবেশ গড়ে ওঠে। প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ ধর্মের মূল শিক্ষাগুলো সমাজে ছড়িয়ে দেয়, তাহলে দেশজুড়ে একটি নৈতিকতার আবহ তৈরি হবে।
মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্পের শিক্ষকদের সম্মানী বাড়ানোর দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মসজিদভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্পের শিক্ষকদের সম্মানী বৃদ্ধি পেলে মন্দিরভিত্তিক প্রকল্পের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও সমান সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। কোনোভাবেই বৈষম্য হবে না।
তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ শিক্ষার জন্য অত্যন্ত অনুকূল। মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার আঙিনায় যে শান্তি ও শুচিতা বিরাজ করে, তা শিশুদের মানসিক গঠনে সহায়ক। আদিকাল থেকেই ধর্মীয় উপাসনালয়ের ছায়াতলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে এবং এখনো বিশ্বের বহু দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ধর্মীয় উপাসনালয় সংযুক্ত রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও ট্রাস্টের সচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও। এ ছাড়া প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক নিত্য প্রকাশসহ অন্যরাও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়)’ প্রকল্পটি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বাস্তবায়ন করছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা জেলার বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক, জেলা প্রশাসন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য, অভিভাবক, শিক্ষা কেন্দ্রের সভাপতি ও সম্পাদক, সনাতন ধর্মীয় প্রতিনিধি, হিন্দু ধর্মীয় ট্রাস্টি এবং সাংবাদিকসহ প্রায় ১৫০ জন অংশগ্রহণকারী। এই প্রকল্পের আওতায় চলতি পর্যায়ে ইতোমধ্যে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০টি জেলায় কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে।
সংগৃহিত প্রতিবেদন