বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে চলমান পতন এবং বাজারের অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, যখন ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তখনই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। বর্তমানে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছেন।
গত দুই মাস ধরে পুঁজিবাজারের পতন থামছে না। বিশেষ করে ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়াকে ‘আশঙ্কাজনক’ বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পতনের প্রধান কারণ হচ্ছে আস্থার অভাব। এছাড়া, ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার, মার্জিন ঋণের বিপরীতে শেয়ার বিক্রি (ফোর্সড সেল), এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অস্থিরতা একত্রিত হয়ে বাজারকে সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বর্তমানে আমানতের জন্য ১১ শতাংশের ওপরে সুদ প্রদান করছে, অন্যদিকে ট্রেজারি রেটও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে সরে গেছেন। একসময় পুঁজিবাজারে ৩৩ লাখ সক্রিয় বিনিয়োগকারী ছিল, বর্তমানে তা কমে ১২ লাখে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে বেশ কিছু খাতে উন্নতি দৃশ্যমান হলেও, পুঁজিবাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনো ফিরে আসেনি এবং পুঁজিবাজারের পতন অব্যাহত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট পতিত হয়েছে, যা টানা ৯ কর্মদিবস ধরে চলতে থাকে। এই ৯ দিনেই ডিএসইএক্স সূচক ২৩৩ পয়েন্ট কমে গেছে। গত এক সপ্তাহে পুঁজিবাজারের মূলধন কমেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ ছাড়া বাজারে আস্থা ফিরে আসবে না। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশি নয়, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছেও হতাশাজনক। বিএসইসির এই পদত্যাগ দাবির পেছনে রয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে একটানা দরপতন এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির অনুভূতি।
এদিকে, বিএসইসি সাবেক চেয়ারম্যান ড. ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেছেন, "শেয়ারবাজারের সঙ্গে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি জড়িত। দেশে বিনিয়োগ নেতিবাচক অবস্থায় আছে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ। এই অবস্থায় শেয়ারবাজারে ভালো প্রবৃদ্ধি আশা করা যায় না।" তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করতে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার করতে হবে।
বিএসইসি পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, কমিশনের মূল কাজ হলো বাজারকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা। তিনি আশা করেন, দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার কাজের মাধ্যমে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, ভালো আইপিও এবং সিকিউরিটিজের অভাব একটি বড় কারণ, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্যাংক খাতে সুদের হার বাড়ানোর কারণে পুঁজিবাজারে আগ্রহ কমে গেছে। এছাড়া, মার্জিন ঋণের উপর ভিত্তি করে শেয়ার ট্রেডিং করার প্রবণতা সংকুচিত হয়ে পড়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
এভাবে চলতে থাকলে, পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে কিনা তা এখন প্রশ্নবোধক। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আনতে দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েই গেছে।
সূত্র:কালের কন্ঠ