প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপানের রাজধানী টোকিওতে অনুষ্ঠিত “নিক্কেই ফোরাম: ৩০তম ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলন-২০২৫”-এ এক প্রভাবশালী বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সব রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট দলই শুধু ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য চাপ দিচ্ছে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য কোনো দলীয় বা ব্যক্তিগত অভিলাষ নয়—বরং একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি নির্বাচিত সরকারকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
ড. ইউনূস বলেন, “আমার ব্যক্তিগত কোনো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা নেই। আমি এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যেখানে মানুষ তাদের ভোটাধিকার নির্ভয়ে প্রয়োগ করতে পারে, ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠা পায়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকে এবং সব রাজনৈতিক শক্তির জন্য একটি সমান সুযোগের নিশ্চয়তা থাকে।” তিনি উল্লেখ করেন, দেশের গণতন্ত্র যাতে আবারও একটি টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে, সেটাই তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন ডিসেম্বরেই হবে কি না, তা নির্ভর করছে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারগুলোর অগ্রগতি কতদূর হয়েছে, তার ওপর। ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হলে অনেক কিছুর দ্রুত সংস্কার করতে হবে, যা অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের একটি সুগভীর ভিত্তি গড়ে তুলতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের জন্য আরও কিছু সময় দরকার। সে কারণে সরকার আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় নিয়ে একটি সুপরিকল্পিত এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের কথা ভাবছে।”
ড. ইউনূস বলেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকার কোনো দলীয় সরকারের বিকল্প নয়, বরং একটি দায়িত্বশীল রূপান্তরকালীন প্রশাসন। আমরা চাই এ সময়ের মধ্যে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে একটি ক্রান্তিকালে, যেখানে গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল এবং রাজনৈতিক আস্থা ছিল চরমভাবে বিপন্ন। আমরা চেষ্টা করছি দেশের মানুষকে সেই আস্থা ফেরত দিতে। বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র চায়, স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ চায়, এবং একটি ভবিষ্যৎমুখী রাষ্ট্র গঠনে অংশ নিতে চায়।”
এ সময় ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও শান্তিপূর্ণ ও মানবিক একটি জাতি হিসেবে পরিচিত। আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে মানবতা দেখিয়েছি। একই সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।”
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা দলীয় সরকারের চেয়ে একটি কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈধ নির্বাচনকেন্দ্রিক গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ার পক্ষে। তার এই অবস্থান দেশের অভ্যন্তরে যেমন গুরুত্ব পাচ্ছে, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে ঘাটতি খুবই ছোট- বাণিজ্য উপদেষ্টা
যারা সংস্কার পিছিয়ে দিতে চায় তারাই নির্বাচন পেছাতে চায়: হাসনাত
সানেম'র জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি ৩৯, জামায়াত ২২, এনসিপি ১৬ ভাগ ভোট পাবে
কুমিল্লা অঞ্চলের ১৬ আসনে খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ