দীর্ঘ সময় ধরে মন্দাভাব পেরিয়ে আসা দেশের পুঁজিবাজারে নতুন আস্থা ও গতি ফেরাতে সরকার বড় ধরনের নীতিগত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে, সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক ও কৌশলগত ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার প্রাথমিকভাবে ৫ শতাংশ করে বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২২ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যেখানে সভাপতিত্ব করেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বৈঠকে অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক এবং আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।
তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তাবিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি
২. বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি
৩. গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি
৪. জালালাবাদ গ্যাস
৫. সিলেট গ্যাসফিল্ড
৬. বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড
৭. রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি
৮. পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি
৯. এলপিজি
১০. বিটিসিএল
১১. টেলিটক
১২. টেলিফোন শিল্প সংস্থা
১৩. বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস
১৪. সোনারগাঁও হোটেল
১৫. ছাতক সিমেন্ট
১৬. কর্ণফুলী পেপার মিলস
১৭. চট্টগ্রাম ডকইয়ার্ড
১৮. ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার
১৯. প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ
২০. আশুগঞ্জ পাওয়ার
২১. ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ
এর আগে ১১ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুঁজিবাজার পুনর্জাগরণে পাঁচটি মৌলিক নির্দেশনা দেন। এগুলো হলো:
এসব নির্দেশনার বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ৬ মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, যেসব বড় কোম্পানি এখনো বাজারমুখী হতে চায় না, তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করে প্রণোদনার মাধ্যমে উৎসাহিত করার কৌশল নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে করহারে ছাড়, প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা।
বিএসইসি (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারে ব্যবধান ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এতে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও গভীরতা আনতে পারে। সরকারি কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে এলে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে। একই সঙ্গে বাজারে নতুন এবং শক্তিশালী বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে।
বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর মতে,
“এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে। তবে বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা ও সময়মতো কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
সরকারি কোম্পানির বাজারমুখীকরণ এবং কর কাঠামো সংস্কার—এই যুগল কৌশল পুঁজিবাজারকে দীর্ঘদিনের স্থবিরতা থেকে উত্তরণের বাস্তব সুযোগ করে দিতে পারে। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের গতিপ্রকৃতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতার ওপর।