বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার ব্যক্তি ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর নিরপেক্ষ পর্যালোচনা ও পরিপ্রেক্ষিতভিত্তিক প্রত্যাহার প্রক্রিয়া। সরকার ইতোমধ্যে সারাদেশে ১০ হাজার ৫০৬টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন-১ শাখা। বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে যেসব মামলা হয়রানিমূলকভাবে করা হয়েছিল, সেগুলোর আইনানুগ পর্যালোচনা শেষে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
ফ্যাসিস্ট শাসনের প্রতিক্রিয়ায় ন্যায়বিচারের পথে পদক্ষেপ
অন্তর্বর্তী সরকারের মতে, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনীতিকে দমন করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হাজারো মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যেগুলোর অনেকগুলোতেই ছিল না কোনো গ্রহণযোগ্য তদন্ত বা যুক্তিসংগত অভিযোগ। এই বাস্তবতায়, সরকারের ন্যায়ের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে শুরু হয়েছে এই উদ্যোগ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দেশের প্রতিটি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর বিস্তারিত নম্বর ও তথ্য পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়েছে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটরদের সঙ্গে পরামর্শ করে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে। মামলা প্রত্যাহারের আইনি ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা, যার আওতায় সরকার পক্ষ থেকে মামলা ‘না চালানোর’ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
দুটি স্তরের কমিটি, কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের কাঠামো
এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে গঠিত হয়েছে দুটি পর্যায়ের কমিটি: জেলা পর্যায় এবং মন্ত্রণালয় পর্যায়।
জেলা পর্যায়ের কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। কমিটির সদস্য হিসেবে থাকছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার), ও পাবলিক প্রসিকিউটর।
যদি জেলা কমিটি কোনো মামলাকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মনে করে, তবে তা সরকারের কাছে প্রত্যাহারের সুপারিশ হিসেবে পাঠানো হবে। সেই সুপারিশ এবং মামলার সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে আবেদন করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় পর্যায়ের পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
উপরে পাঠানো সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি। এই কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। সদস্যসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব। এছাড়া আইন ও প্রশাসনের আরও কয়েকজন সদস্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে যেসব মামলাকে প্রত্যাহারের জন্য উপযুক্ত বলে চিহ্নিত করে, সেগুলোকে একটি তালিকায় রেজল্যুশনের মাধ্যমে অনুমোদন দিয়ে ফেরত পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি পাঠানো হয়।
২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়কাল কাভার
এই উদ্যোগের আওতায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রতিকার পাবে। তবে এর জন্য আবেদনকারীদের যথাযথভাবে এজাহার ও অভিযোগপত্রের সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হবে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসান বলেন, “এই উদ্যোগের লক্ষ্য নিরপরাধ ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অহেতুক হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ তত্ত্বাবধানে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।”
এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগের সরকারের ‘ফ্যাসিস্ট’ শাসনামলের অনৈতিক ব্যবহার ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের ইতিহাস থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে বর্তমান প্রশাসন। এর মাধ্যমে আইনের শাসন ও রাজনৈতিক পরিসরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র:নয়াদিগন্ত
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন বলে বিবিসি আই- এর একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে
গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১০ জুলাই
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনে দ্বিতীয় দিনের শুনানি আজ
আদালত অবমাননার মামলা: শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড