বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর হত্যাকারীদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠা পেতে দেওয়া হবে না।
রোববার পাবনার সাঁথিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, "মাওলানা নিজামী একটি ইতিহাস, একটি নাম। তাঁর সঙ্গে জেলখানায় শেষবার দেখা হয়েছিল। সে সময় তিনি জীবনের বহু বিষয় আমার সঙ্গে শেয়ার করেছেন।" তিনি বলেন, "ক’জনই বা জানতো পাবনার সাঁথিয়ার নাম? অথচ মনমথপুরের সন্তান নিখিল পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতি হয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতের আমীর ছিলেন।"
তিনি আরও বলেন, ভারত মাওলানা নিজামীর নেতৃত্বকে ভয় পেত। তাদের জানা ছিল, যদি দুই মহিলা (খালেদা-হাসিনা) না থাকেন, তাহলে নিজামী বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসবেন। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে সাজানো বিচারের আয়োজন করা হয়। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা তদন্ত এবং মিথ্যা বিচারকের মাধ্যমে এই বিচারিক গণহত্যা পরিচালিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই বিচারকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে আখ্যা দিয়েছে।
তিনি এ বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এবং বলেন, "এরা খুনি। যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে জনগণই তাদের বিচার করবে।"
রফিকুল ইসলাম বলেন, "হাসিনা পালিয়েছে, তার মন্ত্রীরা পালিয়েছে, কিন্তু আমাদের নেতারা ফাঁসির মঞ্চে কালেমা পড়ে গিয়েছেন, পালিয়ে যাননি।" তিনি শহীদ মীর কাসেম আলীর উদাহরণ দিয়ে বলেন, "তিনি চাইলেই আমেরিকায় থাকতে পারতেন, কিন্তু নিজামী ভাইদের রেখে থাকতে পারেননি।"
তিনি আরও বলেন, "শুধু প্রধানমন্ত্রীই পালাননি, জাতীয় মসজিদের ইমাম পর্যন্ত পালিয়েছেন। তারা বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করতে চেয়েছিল।"
তিনি দাবি করেন, সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের বিচার করতে হবে। যারা জামায়াতের পোশাক ছেড়ে অন্য দলের হয়ে জয়ী হতে চাচ্ছে, তারাও রেহাই পাবে না। পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং স্থানীয় নির্বাচন শেষে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
তিনি বলেন, “১৮ কোটি মানুষ ঠিক করবে কাকে ক্ষমতায় পাঠাবে। সচিবালয় থেকে চায়ের দোকান পর্যন্ত রব উঠেছে—সব দল দেখা শেষ, এখন জামায়াতে ইসলামী।”
মাওলানা রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, "ফ্যাসিবাদী হাসিনা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। আগামী ১৩ তারিখের মধ্যে তা ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাই।"
তিনি বলেন, শহীদদের স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। জামায়াতে ইসলাম ইসলামের কল্যাণে লড়াই করতে চায়, মাঝখানে কোনো বিরতি নেই।
সভায় সভাপতিত্ব করেন শহীদ মাওলানা নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন। তিনি বাবার আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা আবদুর রহীম, জেলা আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল, সিরাজগঞ্জ জেলা আমীর মো. শাহিনুর আলম, ডা. আবদুল বাসেত খান, ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, মাওলানা জহুরুল ইসলাম খান, প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসাইন, মাওলানা আবদুল গাফফার খান, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার চেয়ারম্যান একেএম রফিকুন্নবী প্রমুখ।
জেলা আমীর আবু তালেব মন্ডল বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাদের শীর্ষ নেতাদের শহীদ করে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই তারাই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।”
প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসাইন বলেন, "শুধু দ্বীনের দায়িত্ব পালনের কারণে ২০১৬ সালের ১১ মে নিজামীকে ফাঁসি দেওয়া হয়, আর সেই একই তারিখে আওয়ামী লীগও রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছে।"
ডা. আবদুল বাসেত খান, ব্যারিস্টার আরমান, ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন, আলী আহমদ মাবরুর, নেসার আহমেদ নান্নু, হাসান জামিলসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্যে শহীদদের স্মৃতিচারণ করেন এবং ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রাসেল হোসেন, প্রদীপ কুমার সাহা, অসীম কুমার দাস, একেএম রফিকুন্নবী এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
মিলাদ মাহফিল ও দোয়া পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন।