যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্কে মঙ্গলবার (৯ জুন) বিকেলে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। রাজনীতির রূঢ় বাস্তবতা ছাপিয়ে এদিন সেখানে পরিণত হয় যেনো এক জনতার উৎসবে। মানুষ এসেছিল দল-মত-নির্বিশেষে, শ্রেণি-পেশার পার্থক্য ভুলে একটি কেবল উপলক্ষে—প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানাতে।
এই সমাবেশ শুধুই কোনো রাজনৈতিক দল বা কর্মসূচির ডাক ছিল না, বরং ছিল সামাজিকভাবে আয়োজিত এক গণউদ্যোগ, যেখানে মানুষের অংশগ্রহণই ছিল প্রধান ভাষা। অনেকে বলছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর এই পার্কে প্রথমবারের মতো এমন জনস্রোত দেখা গেল, যেখানে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছিল গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের প্রধানকে শুভেচ্ছা জানাতে।
মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের আমন্ত্রণে একটি পুরস্কার গ্রহণ করতে লন্ডনে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এই সফরকে ঘিরেই পূর্ব লন্ডনের এই আয়োজন। মূল আয়োজনে ছিল “রিফর্ম বাংলাদেশ” ও “স্ট্যান্ড উইথ ইউনূস” ব্যানারধারীরা। তারা শাসনব্যবস্থার সংস্কার এবং দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যৎ গঠনের লক্ষ্যে ইউনূস সরকারের পক্ষে জনসমর্থনের ডাক দেয়।
সমাবেশের নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল ৫টা, তবে এর আগেই পার্কে জনসমাগম শুরু হয়। ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টার হাতে লোকজন আসতে থাকেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গোটা পার্কে মানুষের ঢল নামে। শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক—
“দিল্লি না ঢাকা?”— সমবেত কণ্ঠে উত্তর আসে: “ঢাকা-ঢাকা।”
“নির্বাচন না সংস্কার?”— উত্তর আসে: “সংস্কার-সংস্কার।”
অনেকেই ব্যানার নিয়ে এসেছিলেন যেখানে লেখা ছিল:
“সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়”
“প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করো”
“দুর্নীতিবাজদের বিচার চাই”
এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গ্রেটার সিলেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার আতাউর রহমান ও প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সিরাজ হক। বক্তৃতা করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ড. ইউনূসের আগমনকে ঘিরে ব্রিটেনে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখা কালো পতাকা প্রদর্শন ও বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছিল। তারা সকালেই সেন্ট্রাল লন্ডনের রোচেস্টার হোটেলের সামনে সমবেত হয়। তবে সেই কর্মসূচির বিপরীতে অনেক সাধারণ মানুষ নিজ উদ্যোগে সেখানে গিয়েই ইউনূসকে স্বাগত জানান। যদিও আলতাব আলী পার্কের প্রধান সমাবেশ ছিল পূর্ব নির্ধারিত এবং বৃহত্তর।
সমাবেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করা হয়:
আলতাব আলী পার্কের এই সমাবেশে বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখা উপস্থিত ছিল না। তবে জানা গেছে, আগামী শুক্রবার সকালে লন্ডনের রোচেস্টার হোটেলের সামনে ড. ইউনূস ও বিএনপি চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই উপলক্ষে বিএনপির সদস্যরা সেখানে সমবেত হবেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা কোনো ব্যানার বা প্ল্যাকার্ড নিয়ে উপস্থিত হবেন না।
এই সমাবেশ শুধু একজন ব্যক্তিকে স্বাগত জানানো নয়, বরং ছিল এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা থেকে উৎসারিত এক গণদাবির প্রতিধ্বনি। প্রবাসের মাটিতে, ইতিহাসের বুকে বারবার উচ্চারিত হচ্ছে— “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়”, আর এই বার্তাই হয়তো দিক নির্দেশনা দিচ্ছে দেশে ও প্রবাসে এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাল যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক
ইরানের প্রেসিডেন্টের দাবি, ইসরায়েল তাকে ‘হত্যার’ চেষ্টা করেছে
খাদ্যের জন্য মৃত্যুকে উপেক্ষা করে গাজায় ক্ষুধার্ত নারী-পুরুষ-শিশুর লড়াই