দেশপ্রেমিক হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন, জাতি গঠনের প্রতিটি প্রেরণা, সাধারণ যুক্তিবোধ ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা আন্তরিকভাবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ করছি—এই ক্রান্তিকালে তিনি যেন দেশের নেতৃত্বের হাল ছাড়বেন না।
হ্যাঁ, আমরা বুঝি, এই দীর্ঘ পথচলায় তার মনে নানা হতাশা জমেছে। কিন্তু সরকারপ্রধান হিসেবে ব্যক্তিগত অনুভূতির ঊর্ধ্বে তার দায়িত্ববোধকে স্থান দিতে হবে। আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি—তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। সেই ভালোবাসাই তাকে দায়িত্বে থাকতে বাধ্য করে। এই মুহূর্তে তার সরে যাওয়ার অর্থ হবে নেতৃত্বশূন্যতা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত রাষ্ট্রকে কার্যকর, নীতিনিষ্ঠ ও স্থিতিশীল নেতৃত্ব প্রদান করাই এখন তার প্রধান দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন করায় জাতি তার কাছে চিরঋণী থাকবে। আমরা, স্বাধীন ও বিবেকসম্পন্ন গণমাধ্যম, নৈতিকতার ভিত্তিতে তার পাশে আছি—যদিও মতানৈক্য, সমালোচনা ও বিকল্প ভাবনার জায়গা সর্বদা খোলা রাখতে হয়, যেমনটি আমরা করছি।
ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ মডেল, সামাজিক ব্যবসার ধারণা এবং 'তিন শূন্যে'র (Zero Poverty, Zero Unemployment, Zero Net Carbon Emissions) স্বপ্ন তাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা এনে দিয়েছে। কিন্তু এসব অর্জন, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, অসংখ্য সম্মান—এসবই তাকে প্রশাসনিক নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করেনি। সরকার পরিচালনা, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জটিল বাস্তবতায়, একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বহুস্তরীয় চ্যালেঞ্জ।
তিনি যখন গণআন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আসেন, জাতি তখন ছিল গভীর অনিশ্চয়তায়। তার আবির্ভাব ছিল এক আশাবাদের প্রতীক। শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই যাত্রায় তিনি হয়ে ওঠেন মুক্তির সম্ভাবনার মুখ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেই নেতৃত্ব ধীরে ধীরে জর্জরিত হয়েছে বাস্তব রাজনীতির জটিলতায় এবং তার টিমের কয়েকজন সদস্যের অদূরদর্শিতা ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক আচরণে।
‘সংস্কার আগে না নির্বাচন?’—এই কৃত্রিম বিতর্ককে তিনি রুখে দিতে পারেননি। অথচ জুলাই সনদের মাধ্যমে নির্বাচন-সহায়ক মৌলিক সংস্কারে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে, সেটিকে ভিত্তি করে একটি গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ তৈরি করা যেত। জুলাই সনদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া এখনো সময়োপযোগী।
অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে, তার সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব দিন দিন বাড়ছে, যা জাতির জন্য ক্ষতিকর। আমরা বিশ্বাস করি, জুনের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকারে তিনি অটল আছেন। সেই লক্ষ্যে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আন্তরিক সংলাপ প্রয়োজন।
এ পরিস্থিতিতে কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:
আমরা বিশ্বাস করি, অধ্যাপক ইউনূস এখনো জাতির প্রত্যাশার প্রতীক। তবে তাকেই বুঝতে হবে, গত ১০ মাসে সব কিছু সঠিক পথে এগোয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, প্রায় প্রতিদিন সড়ক অবরোধ ও সহিংসতা, বিনিয়োগে স্থবিরতা—এসবই বাস্তবতা। একটি ‘চমৎকার প্রেজেন্টেশন’ দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, যদি আস্থা ফিরে না আসে।
এখনো কোনো রাজনৈতিক দল তার পদত্যাগ দাবি করেনি। কিন্তু তার প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়া কিছু শিক্ষার্থীই তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে:
“আপনাকে আমরা ক্ষমতায় এনেছি, প্রয়োজন হলে সরিয়েও দিতে পারি।”
এ বক্তব্যকে হুমকি নয়, গণতান্ত্রিক জবাবদিহির একটি প্রকাশ হিসেবে দেখা উচিত। নেতৃত্বের আসনে থাকা মানেই সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। নেতৃত্বের ভুল স্বীকার করা দুর্বলতা নয়, বরং সত্যিকার নেতৃত্বের সাহসিকতা।
আমরা আজও অধ্যাপক ইউনূসের ওপর আস্থা রাখি। তবে তাকে অবশ্যই তার দৃষ্টিভঙ্গি, নীতি ও সহকর্মী নির্বাচন পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তার গৌরবময় জীবনের নতুন অধ্যায় এখন রচনা হচ্ছে—বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের নেতৃত্ব দিয়ে। এই অধ্যায় যেন সফল হয়, সেটিই আজ জাতির প্রার্থনা।
যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে ঘাটতি খুবই ছোট- বাণিজ্য উপদেষ্টা
যারা সংস্কার পিছিয়ে দিতে চায় তারাই নির্বাচন পেছাতে চায়: হাসনাত
সানেম'র জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি ৩৯, জামায়াত ২২, এনসিপি ১৬ ভাগ ভোট পাবে
কুমিল্লা অঞ্চলের ১৬ আসনে খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ