জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
গত বুধবার রাতে আন্দোলনস্থলে গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ তাকে “ভুয়া, ভুয়া” স্লোগানে লক্ষ্য করে। তিনি মাইক্রোফোন হাতে বক্তব্য শুরু করতেই সামনে থেকে তার দিকে পানির বোতল ছুঁড়ে মারা হয়। এ ঘটনায় তিনি কথা শেষ না করেই দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ঘটনার পরপরই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি মাহফুজ আলমকে একজন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়। তিনি বলেন, “আপনাদের প্রতিনিধিত্বের দাবি বলেই তিনি আপনাদের কাছে এসেছেন। এ ধরনের হঠকারী আচরণ আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।”
হাসনাত আরও বলেন, “সমালোচনা গণতান্ত্রিক অধিকার, কিন্তু শারীরিক লাঞ্ছনা বর্বরতা—এর কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা নেই। আন্দোলনের নেতৃত্বের উচিত প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করা এবং ভবিষ্যতে এমন আচরণ যাতে না ঘটে তার নিশ্চয়তা দেওয়া।”
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দিকেও আঙুল তুলে বলেন, “ছাত্র উপদেষ্টাদের সামনে ঠেলে রেখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কেন এখনও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তা স্পষ্ট করা জরুরি।”
এদিকে মাহফুজ আলমের ওপর হামলার প্রতিবাদে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও নিজের অবস্থান জানান ফেসবুক পোস্টে। তিনি লেখেন, “মাহফুজ আলম জবির দাবির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নন। তারপরও তিনি ছাত্র-জনতার একজন প্রতিনিধি হিসেবে কথা শুনতে এসেছিলেন। যারা তাকে লক্ষ্য করে আঘাত করেছে, তারা আন্দোলনের নৈতিক জায়গাটিকে আঘাত করেছে।”
এর আগে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হন। বেলা ১১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে কাকরাইল মোড়ে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হন। এর প্রতিবাদে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, যা বৃহস্পতিবার সকালেও অব্যাহত ছিল।