ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশে নাগরিক পুশইন এবং গুলি বর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বেআইনিভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের পুশইন করে চলেছে ভারত, যা এক ধরনের কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২৪ ঘণ্টায় তিন জেলায় ১৭২ জনকে পুশইন
গত শনিবার (২৪ মে) রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত সিলেট, মৌলভীবাজার ও মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ অন্তত ১৭২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে জোরপূর্বক দেশে পুশইন করেছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারেই রয়েছে ১২১ জন, সিলেটে ৩২ জন এবং মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন।
মৌলভীবাজার: ১২১ জনকে একযোগে পুশইন
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের দুটি সীমান্তপথ দিয়ে একযোগে ১২১ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করে ভারত। এদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুরাও রয়েছে।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের লে. কর্নেল মেহেদী হাসান জানান, “লাতু ও পাল্লাথল বিওপি ক্যাম্পের আওতাধীন এলাকা দিয়ে এই পুশইন ঘটে। পরে আটকদের বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করা হয়।”
সিলেট: নয়াগ্রাম সীমান্তে ৩২ জনের পুশইন, অমীমাংসিত ভূখণ্ডে ফেলে যাওয়া
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার নয়াগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভোররাতে বিএসএফ ৩২ জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, এদের মধ্যে ১৪ জন শিশু, ৯ জন নারী এবং ৯ জন পুরুষ।
এই পুশইন এমন এক জায়গায় হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ৫৩৮ একর ভূমির অংশ। পরে স্থানীয়রা ও বিজিবি সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তর করেন।
মেহেরপুর: সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ভোররাতে ১৯ জন বাংলাদেশিকে জোর করে দেশে ঢুকিয়ে দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এদের মধ্যে অধিকাংশই উত্তরবঙ্গের নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের বাসিন্দা বলে দাবি করেছেন। তবে অনেকের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল না, ফলে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিএসএফের গুলিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহত ২
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাদলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২ জন বাংলাদেশি গুরুতর আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন মো. রবিউল ইসলাম (২৮) এবং মো. আজাদ হোসেন (২৬)।
বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান জানান, “রাত দেড়টার দিকে তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের দিকে গেলে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে ছররা গুলি ছোড়ে।”
এসময় স্থানীয়দের দাবি, ঈদ সামনে রেখে সীমান্তে চোরাচালান বেড়ে গেছে এবং এতে করে চোরাকারবারীরা ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করছে।
বিশ্লেষণ ও উদ্বেগ
এই ধারাবাহিক পুশইন এবং গুলি বর্ষণ সীমান্ত আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিপন্থী। এটা শুধুমাত্র মানবিক সংকটই সৃষ্টি করছে না, বরং দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিক সম্পর্কের ওপরও চাপ ফেলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের আচরণ একটি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের ভূমিকা ও দায়বদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও, এখনো পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
সীমান্ত পরিস্থিতির এই ক্রমাবনতি নিয়ে দেশের সচেতনমহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং পুশইন ও সীমান্তে সহিংসতা বন্ধে দ্রুত ও কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র:নয়াদিগন্ত