শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রতীক ১ মে মহান মে দিবস পালন হলেও বাস্তবে মেহনতি মানুষের অধিকার আজও অধরাই থেকে গেছে। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে রক্তাক্ত আন্দোলন থেকেই বিশ্বজুড়ে মে দিবসের প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে। পৃথিবীর নানা দেশে শ্রমজীবী মানুষ ন্যায্য মজুরি, মানবিক আচরণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবি আদায়ে আজও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে “রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে—কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা,” বলা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সেই অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থতা ধরা দিয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগামী হিসেবে সাড়াগাড়ি উন্নয়নের ছাপ ফেললেও শিল্প-কারখানায় দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমে জীবিকা পালনকারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কাজ করছেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) পরিসংখ্যানে এশিয়া–প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশে মজুরি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। তৈরি পোশাকসহ নির্দিষ্ট খাতে ন্যূনতম মজুরি বেঁধে রাখা সত্ত্বেও সংস্কার নেই অন্যান্য শিল্পে; ফলে শ্রমিকদের হাতে থাকে চাওয়ার চেয়েও কম পারিশ্রমিক। কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি–রক্ষাকবচের অভাব, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতার স্যাটেলাইট ঘটনার অভিজ্ঞতা শ্রমিকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাপে যখন স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটল, শ্রমিকদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, ঠিক তখনই চাকরি হারিয়েছে ১১৫ হাজারের মতো গার্মেন্টস শ্রমিক। বিজিএমইএ’র তথ্যানুযায়ী মাত্র ১৫ মাসে ১১৩টি কারখানা বন্ধ হওয়ায় ৯৬ হাজারেরও বেশি মানুষ বেকার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। অন্যান্য শিল্প-কারখানার তালিকাও একই রকম উদ্বেগজনক।
অন্তর্বর্তী সরকার শ্রম সংস্কার কমিটি গঠন করে শ্রম আইন সংশোধন ও মজুরি নির্ধারণ, বার্ষিক মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয়, ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা বাড়ানো, মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার মতো সুপারিশ দিয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন জানান, উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় শ্রম আইন শিগগিরই সংশোধিত হবে—যা শ্রমিক নিরাপত্তার নতুন দ্বার খুলবে।
তবে আদ্যোপান্ত বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য অপরিহার্য। শ্রমিক-নেতা, মালিক-দল ও সরকার মিলেমিশে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ না করলে সুপারিশগুলো ছেড়ে আনুষ্ঠানিকতার ফাঁদে আটকা পড়বে। মালিকদেরও মনোযোগ দিতে হবে—শ্রমিককে ঠকিয়ে শিল্প চালু রাখা যায় না। শ্রমিক বাঁচলেই শিল্প বাঁচবে, শিল্প বাঁচলে দেশ বাঁচবে—এই সত্য উপলব্ধি ছাড়া মে দিবস হবে শুধুমাত্র স্মারক।
আজকের মে দিবসে শুধু ফুল, পতাকা ও সভার ঢোল, নিছক আনুষ্ঠানিক করে সীমাবদ্ধ রাখার সময় নয়; যখন শ্রমিকেরা জীবনের অধিকার আর মর্যাদা পাবে, তখনই এই দিন প্রকৃত অর্থে বিজয়ের দিবস বলে স্বীকৃতি পাবে।
নিন্দার কাঁটা ও আদর্শবাদী এক্টিভিজম - ওয়াজ কুরুনী সিদ্দিকী
কা'বা দর্শণ আল্লাহর এক নিয়ামত : অধ্যাপক আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন
যাকাত ও সাদাকা : দারিদ্র্য বিমোচনের মানবিক সমাধান
যাকাতের মাধ্যমেই দেশ হতে পারে স্বনির্ভর - আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন