২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে রাতে সংঘটিত রক্তাক্ত অভিযানে নিহত হন যশোরের হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নু, যিনি 'নান্নু হুজুর' নামে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। পরিবারের দাবি, তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। সেজন্যই তাকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়।
নান্নুর মেয়ে উম্মে সাদিয়া ও উম্মে সুমাইয়ার ভাষ্যমতে, সেদিন রাত ২টার পর ব্ল্যাকআউট করে চালানো অভিযানে মতিঝিল থেকে পালাতে গিয়ে কাকরাইল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তাদের বাবা। পুলিশের নির্যাতনে তার পা ভেঙে দেওয়া হয় এবং গুলি করা হয় শরীরের বাম পাশে। পরে তাকে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রাখা হয়।
এক তরুণের সহায়তায় গুলিবিদ্ধ নান্নুকে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশি তৎপরতার কারণে সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে হয় তাকে। দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা পর শুরু হয় তার চিকিৎসা। মিলেনিয়াম হার্ট অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ছয়দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর পুলিশি হয়রানির আশঙ্কায় ১০ মে যশোর নেওয়ার পথে সাভারের রানা প্লাজার সামনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
পরদিন ভোররাতে যশোর শহরের খড়কি এলাকায় বাড়িতে পৌঁছানো লাশ দাফনে বাধা দেয় পুলিশ। তারা দাবি করে, ‘দুর্ঘটনায়’ মৃত্যু হয়েছে জানালে পরিবারকে এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু পরিবার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সকাল ৭টায় সরকারি এমএম কলেজ মাঠে জানাজা শেষে খড়কি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সাঈদীর সাক্ষী হওয়ার ‘মূল্য’
জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল জানান, ১৯৭০-এর দশকে আল্লামা সাঈদীর সঙ্গে নান্নুর পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। ট্রাইব্যুনালের মামলায় নান্নু, তার বাবা-মা এবং বড় ফুফু সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সাঈদীর পক্ষে। মেয়েদের মতে, মৃত্যুর আগে তিনি নিজেই বলেছেন, এই সাক্ষ্যদানের কারণেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ গুলি করার আগে তাকে বলেছিল, ‘তুই তো সাঈদীর মামলার সাক্ষী, তোকে অনেক দিন ধরে ফলো করছি।’
দুর্দশায় পরিবার
নান্নুর স্ত্রী শাহনাজ বেগম একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। বড় মেয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত ও ডিভোর্সপ্রাপ্ত। ছোট মেয়েরও সংসার ভেঙে গেছে। বড় ছেলে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করেন। লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি আরেক ছেলে হানজালা, যিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত। পরিবারটির প্রায় সবাই অসুস্থ এবং আর্থিকভাবে চরম সংকটে।
সম্পত্তি নিয়েও বিপদে
নান্নুর মৃত্যুর পর তার ভাইপো ও স্থানীয় মাদরাসা শিক্ষক মারুফ সিদ্দিকী পরিবারের মালিকানাধীন বাড়িটি ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। একটি জমি যৌথভাবে কেনার পর তার অর্ধেক নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেন তিনি। আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় ওই জমির দখলও নিতে পারেনি পরিবারটি।
সীমিত সহায়তা
জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম থেকে এককালীন ও মাসিক কিছু সহায়তা পেয়ে থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। স্থানীয় প্রশাসক আজাহারুল ইসলামও কিছু কাপড় ও সেলাই মেশিন দিয়েছেন। তবে পরিবারের দাবি, এসব সহানুভূতিমূলক সহায়তা স্থায়ী সমাধান নয়। একজন সদস্যের চাকরি হলেই পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে পারে।
বিচারের দাবি
শাহনাজ বেগম ও তার সন্তানরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়ী করেন এবং বিচার দাবি করেন। নিহত নান্নুর একমাত্র জীবিত ভাই হাফিজুর রহমানও এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
সূত্র:আমার দেশ
শহীদ আলিফ আহম্মেদ সিয়াম-এর কবর জিয়ারত করলেন বাগেরহাটের জামায়াতের নেতৃবৃন্দ
গণঅভ্যুত্থান স্মরণে বাগেরহাটে শহীদ পরিবারে সাক্ষাৎ ও কবর জিয়ারত কর্মসূচি
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার
আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার মধ্যেই নিহিত এতিম লালন-পালনের স্বার্থকতা - ধর্ম উপদেষ্টা