ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকাটি ছিল ১৯৩০-এর দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদিদের কৃষি খামারের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে ইহুদিদের পাশাপাশি বসবাস করতেন ফিলিস্তিনি আরবরা, যাদেরও কৃষি খামার ছিল। তখনকার সময়ে মুসলমান এবং ইহুদিদের সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। তবে ১৯৩০-এর দশকে ফিলিস্তিনিরা উপলব্ধি করেছিল যে, তারা ধীরে ধীরে জমি হারাচ্ছে, কারণ ইহুদিরা সংখ্যা বাড়িয়ে জমি ক্রয় করে যাচ্ছে।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়। তারা আশা করেছিল যে, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে এবং তারা ফিরে যাবে, কিন্তু ইসরাইল কখনো তাদের ফিরতে দেয়নি।
ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন যে, ফিলিস্তিনিরা ১৯৪৭ সালে তাদের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিল। তিনি বলেন, "আমরা কোনো ভুল করিনি, তাদের ভুলের জন্য আমরা কেন ক্ষমা চাইবো?"
১৮৯৭ সালে ইহুদিরা নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা শুরু করেছিল। ১৯১৭ সালে ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা "বেলফোর ডিক্লারেশন" নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ১৯৪৫ সালে, ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান এ বিষয়টিতে সওয়াল করেছিলেন।
১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়: একটি ইহুদিদের জন্য এবং অপরটি আরবদের জন্য। যদিও ইহুদিরা ফিলিস্তিনের ১০ শতাংশ জমির মালিক ছিল, তাদেরকে মোট জমির অর্ধেক ভাগ দেওয়া হয়। তবে, ফিলিস্তিনিরা এটি মেনে নেয়নি এবং জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়।
এ পরিস্থিতিতে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করে। এর পরপরই আরব দেশগুলো ইসরাইলকে আক্রমণ করে, যার মধ্যে ছিল মিশর, ইরাক, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়া। তবে, আরব দেশগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না, আরব নেতাদের মধ্যে আস্থার অভাব ছিল, ফলে ইসরাইল যুদ্ধের ময়দানে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ইসরাইলের সেনাবাহিনী একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে থাকে এবং ১৯৪৮ সালে যুদ্ধের পর ইসরাইল অবশেষে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যুদ্ধের পর, ইসরাইলি বাহিনী দ্রুত সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
এ ইতিহাসের ভিত্তিতে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, যদি ফিলিস্তিনিরা ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে নিতো, তাহলে আজ হয়তো ইসরাইল ও ফিলিস্তিন শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি বসবাস করতো। তবে, পারষ্পরিক আস্থার অভাবে এবং আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না