জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজীর পথ ধরে এবার বাংলাদেশের ফুটবলে যুক্ত হতে যাচ্ছেন আরেক প্রবাসী ফুটবলার—কানাডা প্রবাসী সামিত সোম। মিডফিল্ড পজিশনে খেলা এই ফুটবলার বর্তমানে খেলছেন কানাডার শীর্ষ পেশাদার ফুটবল লীগে, ক্যাভালরি ফুটবল ক্লাবে।
২৭ বছর বয়সী সামিতের শেকড় বাংলাদেশের সিলেটের শ্রীমঙ্গলে। তার বাবা মানস সোম ও মা নন্দিতা সোম ৯০-এর দশকে কানাডায় পাড়ি জমালেও সামিতের মধ্যে দেশীয় টানটা রয়ে গেছে। সেই টানেই এবার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সামিত সরাসরি গণমাধ্যমে কথা বলতে এখনই নারাজ, কারণ তার পাসপোর্ট প্রক্রিয়া এখনো চলমান। তবে তিনি জানিয়েছেন, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা তারকা হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্তই তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। হামজার ‘ঘরে ফেরা’ সামিতের পরিবারকে বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী করেছে।
২০২০ সালেই একবার পরিবারসহ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন সামিত। তখনও কিছু দ্বিধা থাকলেও এবার বেশ দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। বর্তমানে জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা চলছে। পাসপোর্ট হাতে পেলেই কানাডার ফুটবল ফেডারেশনের ছাড়পত্র সংগ্রহ করে ফিফার কাছে জাতীয় দলের হয়ে খেলার আবেদন করবেন সামিত।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ডিজিটাল মিডিয়া কমিটির সদস্য অমিত হাসান জানান, ২০২৪ সাল থেকে সামিতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন তিনি। মূলত কানাডার বাংলাদেশি কমিউনিটির মাধ্যমেই সামিতের খোঁজ পান অমিত। সামিত বাংলা ভাষায় অনায়াসে কথা বলেন এবং বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন।
অমিত বলেন, “আগে সামিতের পরিবার কিছুটা দ্বিধায় ছিল—বাংলাদেশের ফুটবল কাঠামো, আবাসন ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। তবে হামজা চৌধুরীর মাঠে নামার পর সেই দোলাচল কেটে গেছে। সামিত এখন দৃঢ়ভাবে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।”
সামিত এরই মধ্যে কানাডার জাতীয় দলের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছেন এবং বয়সভিত্তিক দলেও খেলেছেন। তাই ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে হলে কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট সংগ্রহ, কানাডার ফেডারেশন থেকে ছাড়পত্র এবং ফিফার ছাড়পত্র—সবকিছু মিলিয়ে একটা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
বাফুফে চায়, আগামী ১০ জুন ঢাকায় এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই সামিতকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
ফর্টিস ক্লাবের ম্যানেজার ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার রাশেদুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “হামজা চৌধুরীর আগমন বাংলাদেশের ফুটবলে একধরনের জনস্রোত তৈরি করেছে। সামিত শোমের মতো প্রবাসীদের আগ্রহও তারই প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, “হামজা শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছেন। সামিত সেই সম্ভাবনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে বাংলাদেশের ফুটবল আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।”
সামিতের আগমন যদি সফল হয়, তবে প্রবাসী বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল আন্তর্জাতিক মানে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে, এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না