ভারত সরকারের বিরুদ্ধে আবারও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে—হাজার হাজার মুসলিম এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে সন্দেহভাজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সীমান্ত পার করে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আটককৃতদের মধ্যে অনেকেই প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক, যাদের পাঠানো হয়েছে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই।
বাংলাদেশ সীমান্তে আসা ব্যক্তিদের অনেকেই বলেছেন, তারা ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে পুশ ইন-এর শিকার হয়েছেন। যারা প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন, তাদের বন্দুক দেখিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ইতোমধ্যে প্রমাণসহ অন্তত ২০০ জন ভারতীয় নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এদের মধ্যে রয়েছেন ৬২ বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী হাজেরা খাতুন।
২৫ মে, কাশ্মিরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ চিহ্নিত করার নামে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে ভারত। সেই দিনই হাজেরা খাতুনকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন রাতেই ১৪ জন মুসলিম পুরুষের সঙ্গে তাকে একটি ভ্যানে করে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাজেরা বলেন, “আমি বলেছিলাম আমি ভারতীয়, কেন বাংলাদেশে যাব? তখন তারা বন্দুক তুলে বলল, ‘যাবে না তো এখানেই গুলি করব’। এরপর ৪টি গুলির শব্দ শুনে আমরা ভয় পেয়ে সীমান্ত পার হই।” বাংলাদেশে প্রবেশের পর বিজিবি তাদের আটক করে এবং ভারতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে ফেরত পাঠায়।
তিনি যখন তার গ্রামে ফিরে আসেন, তখন তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল, এবং তিনি মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত ছিলেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পুশ ইন বন্ধে একাধিকবার ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েও কোনো জবাব মেলেনি। বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সিনিয়র গবেষক তাসকিন ফাহমিনা বলেন, “বিচারবহির্ভূতভাবে মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।”
বিশেষ করে আসাম রাজ্যে মুসলিমদের লক্ষ্য করে পুশ ইন এবং নির্বাসন বেশি দেখা যাচ্ছে। বিজেপি শাসিত আসাম বহুদিন ধরে 'অনুপ্রবেশকারী' ইস্যুতে কঠোর। সম্প্রতি রাজ্যটিতে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে নোটিশ পেয়ে অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ।
২০১৯ সালে বিতর্কিত নাগরিকত্ব তালিকা (NRC) থেকে বাদ পড়ে লাখো মানুষ। অথচ হিন্দু, শিখ, জৈনদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) প্রণয়ন করে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ থেকেও মুক্তি দেয়।
হাজেরার মতোই আরেক ভারতীয় নাগরিক, ৬৭ বছর বয়সী মালেকা বেগম এখনো বাংলাদেশের এক সীমান্তবর্তী গ্রামে আটকে আছেন। তার ছেলে ইমরান জানান, “আমার মায়ের সমস্ত কাগজপত্র রয়েছে, তবুও তাকে জোর করে পাঠানো হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসাম পুলিশ কিংবা বিএসএফ কোনো মন্তব্য করেনি। ভারত সরকার আগে থেকেই এই ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, যদিও আন্তর্জাতিক মহল বিষয়টিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।