বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সিয়াম মোল্লা (১৭ নামে নিহত এক কলেজ শিক্ষার্থী এবং রাকিব মোল্লা (১৮) নামে গুলিবিদ্ধ অপর এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর নামে পুলিশের কাছে কোনো অপরাধমূলক তথ্য পাওয়া যায়নি। নিহত সিয়াম মোল্লা কারফা আইডিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং গুরুতর আহত রাকিব মোল্লা চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
জানা যায়, গত ২১ এপ্রিল বিকালে উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোল্লাপাড়া গ্রামের একটি কবরস্থানে অভিযানে অংশ নেয় র্যাব-৮। ওই অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে সিয়ামের মৃত্যু হয় এবং রাকিব বর্তমানে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তবে, এ বিষয়ে র্যাব গত ২২ এপ্রিল যে এফআইআর দায়ের করেছে, তাতে উভয়ের বয়সই ২০ বছর উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদের জন্মসনদ অনুযায়ী সঠিক নয়।
র্যাবের অভিযোগ, তারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৩৯৩ পিস ইয়াবাসহ সিয়াম ও রাকিবকে আটক করে। অভিযানের সময় তারা চিৎকার করলে সহযোগীরা ফিরে আসে এবং ধাওয়া খেয়ে দুই র্যাব সদস্যকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলির ঘটনা ঘটে। র্যাবের দাবি, ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাকিরা পালিয়ে যায়।
তবে মামলার প্রধান স্বাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা স্থানীয় ইউপি সদস্য সুখদেব বাড়ৈ নিজেই জানিয়েছেন, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এবং অভিযুক্তদের কাউকেই তিনি দেখেননি। ‘আমাকে স্বাক্ষী হতে বলা হয়েছে, তাই হয়েছি,’ বলেন তিনি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, অভিযান চলা এলাকাটি আগে থেকেই মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত হলেও সিয়াম ও রাকিবকে তারা কখনো মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেখেননি। ঘটনাস্থলের পাশের বাসিন্দা টিটু হাওলাদার জানান, অভিযানের সময় তারা কাছের একটি দোকানে কথা বলছিলেন। হঠাৎ ডাকাত ডাকাত চিৎকারে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং এরপর ধস্তাধস্তি ও গুলির ঘটনা ঘটে।
রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়ে পুকুরে পড়ে গেলেও সাঁতার কেটে পাড়ে ওঠেন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অস্ত্রোপচার করা হয়। গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সনদ অনুযায়ী, সিয়ামকে সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পরিবারের দাবি, সিয়াম ও রাকিব মাদকের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। “সে বুঝতে না পেরে ঘটনাস্থলে চলে গিয়েছিল,” বলেন সিয়ামের চাচাতো বোন মিম আক্তার। আহত রাকিবের ভাবী নাসরিন বেগমও বলেন, “সে কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিল না।”
এই ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ২৩ এপ্রিল সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে তারা বিক্ষোভ করে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
এদিকে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিল্টন মণ্ডল জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যা সিয়াম ও রাকিবের মাদক চোরাকারবারে সম্পৃক্ততা প্রমাণ করে। “তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারেরও কোনো প্রমাণ নেই,” বলেন তিনি। অপর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্বাস উদ্দিনও তাদের বিরুদ্ধে পূর্ব অপরাধের কোনো রেকর্ড পাননি।
আগৈলঝাড়া থানার ওসি অলিউল ইসলাম জানান, অভিযানের বিষয়ে র্যাব থানাকে আগে থেকে কিছু জানায়নি। অভিযানের অভিযোগকারী র্যাব কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
র্যাব-৮-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মাহমুদুল আহসান জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে এবং এখন পর্যন্ত সিয়াম ও রাকিবের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় স্থানীয় পর্যায়ে যেমন ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তেমনি র্যাবের অভিযান এবং দায়ের করা মামলার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার
শহীদ আলিফ আহম্মেদ সিয়াম-এর কবর জিয়ারত করলেন বাগেরহাটের জামায়াতের নেতৃবৃন্দ
গণঅভ্যুত্থান স্মরণে বাগেরহাটে শহীদ পরিবারে সাক্ষাৎ ও কবর জিয়ারত কর্মসূচি
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার
আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার মধ্যেই নিহিত এতিম লালন-পালনের স্বার্থকতা - ধর্ম উপদেষ্টা