আজ রানা প্লাজা ট্রাজেডির এক যুগ অতিবাহিত হচ্ছে। ২০১৩ সালের আজকের দিনে (২৪ এপ্রিল) আট তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ হারান ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার জন। দেশের ইতিহাসে সাভারের রানা প্লাজা ধস একটি বড় ধরনের ট্র্যাজেডি। এই ঘটনা বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে নাড়া দিয়েছিল বিশ্বকেও। মর্মান্তিক এ ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতিকে স্বরণ করে লেখা হয়েছে অসংখ্য কবিতা গল্প গান নাটক। বাংলাদেশ বেতারের সংবাদ পাঠক কবি রবিউল মাশরাফী দিনটিকে স্মরণ করে লিখেছেন এই কবিতাটি।
রানা প্লাজা-একটি ট্রাজেডি
রবিউল মাশরাফী
বেদনার জলে ভেজা চব্বিশে এপ্রিল, দু'হাজার তেরো।
সেদিনের সূর্যটাও আলো জেলেছিল ঠিক আগের মতন
তবুও মরণ ফাঁদ লুকায়িত ছিল দিনের আলোয়।
সাভারের রানা প্লাজা বয়সের ভারে
ন্যুব্জ ছিল না মোটেই-
মিথ্যার উপরে গড়া শক্তিহীন মেরুদন্ডে ভর করে থাকা স্থুল রানা প্লাজা,
কী এমন কষ্ট নিয়ে শুয়ে পড়েছিল?
জানেন সোহেল রানা!
ইট পাথরের গায়ে সিঁদুরের মতো লেগেছিল খুন।
পিয়াসে উরস ফাটে ওষ্ঠাগত প্রাণ !
শরমের মরমের নিঃসৃত পানিতে
গলা ভেজালেন কেউ।
যে মা তার শিশুটিকে দুধ পান না করায়ে রেখে এসেছিল
সে মায়ের ইচ্ছে হয়, একবার তাকে দুধ পান করাবেন।
কিন্তু একি হলো হায়!
যমদূত কুঠার হাতে শিয়রে দাঁড়িয়ে
তাতাল আগুনে পুড়ে, নিভে গেল প্রাণ ।
রানা প্লাজার ছোবলে চিরতরে ঘুমিয়ে গেলেন এগারোশো পঁচাত্তর রক্তিম শ্রমিক
তাণ্ডবের ভাঁজে ভাঁজে ঝরা শেফালির মতো পড়েছিল অগণিত লাশ,
এক হাজারেরও বেশি, করেছিলো নিদারুণ পঙ্গুত্ব বরণ।
সাভারের রানা প্লাজা আজ আর নেই।
তবু নিস্তব্ধ আঁধারে শ্রমিকের লাশ এসে ভিড় করে
লাশেদের ফিসফাস! কে কাকে কি কথা বলে বুঝি অনুমানে
তারপর সারি বেঁধে দূর পথে চলে যায় বাতিহীন ঘরে।
বাতাসের ঢেউয়ে ঢেউয়ে হাজারো লাশের গন্ধ ভেসে আসে নাকে
আর কতো লাশ পেলে তৃপ্ত হবে পাষণ্ডের মন?
আর কত রক্ত খেয়ে শান্ত হবে ওই ব্যাঘ্র চোখ?
পিয়ানো-রিডের মতো পাঁজরের হাড় চেপে চেপে
ব্যথাতুর সুর তোলো ক্ষুধার্তের প্রাণে?
বুকের কপাট খুলে, দেখো তার হৃদপিন্ডের তলে
অগণিত হাহাকার!
শতাব্দী শতাব্দী ধরে শ্রমিকের কতো স্বপ্ন, বরফের নিচে চাপা পড়ে আছে।
সময়ের মৃত্তিকায় এবারও কি তবে ঢাকা পড়ে যাবে
লাশের কফিনে লেখা দাবি আদায়ের রক্তমাখা চিঠি?
বাড্ডা, ০১.০৫.২০১৩
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না