দেশের শেয়ার বাজারে টানা দরপতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৯ পয়েন্টের বেশি কমে নেমে এসেছে ৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে, যা ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে একটি মনস্তাত্ত্বিক পতনের ইঙ্গিত দেয়।
গত টানা ৯ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে মোট ২২৯ পয়েন্ট এবং গত আট মাসে ৮০২.৯০ পয়েন্ট। সূচকের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনও কমে গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে—বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৩৬৭ কোটি টাকা। বাজারে এমন দরপতনের মধ্যে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজারের মূল সমস্যা চিহ্নিত বা সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করে সম্প্রতি মতিঝিলে বিক্ষোভও করেছেন তারা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। গত আট মাসে একটি কোম্পানিও তালিকাভুক্ত হয়নি, এমনকি গঠিত টাস্কফোর্সের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও এখনো আসেনি। ফলে বাজার উন্নয়নের কোনো বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, তাদের পুঁজির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ হারিয়ে গেছে। ব্রোকার হাউজগুলোর লোকসান বেড়ে যাওয়ায় অনেক শাখা বন্ধের পথে, কর্মী ছাঁটাই চলছে। একটি বড় ব্রোকার হাউজের মালিক জানান, বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠান মাসে ১৫-১৭ লাখ টাকা লোকসানে চলছে। সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট থাকলেও দিনে মাত্র ৮০-৮৫টি অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হচ্ছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান বলেন, “শেয়ার বাজারে এমন হতাশা এর আগে দেখা যায়নি। বাজারের মূল সমস্যা চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে।” ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুদ্দিন বলেন, “পুঁজিবাজারে সুশাসনের অভাবই বড় সংকট। যেখানে পুঁজির নিরাপত্তা নেই, সেখানে বিনিয়োগকারীরাও থাকবে না।”
অন্যদিকে, বিএসইসির মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, “বর্তমান কমিশন চায় বাজার স্বাভাবিক নিয়মে চলুক। সূচক বাড়া-কমা নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। টাস্কফোর্সের তিনটি বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, পুরো রিপোর্টের পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আস্থার সংকট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বিনিয়োগকারীদের বিপর্যয় আরও গভীরতর হবে।
সংগৃহিত প্রতিবেদন
২ মেগা প্রকল্পে সহায়তা, বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার
এবি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি: গোপনে খেলাপি ১৬ হাজার কোটি টাকা!
সিপিডি জানাল: ২০২৩-এ কর ফাঁকিতে দেশ হারিয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা
ভিয়েতনাম চাল পাঠাল, দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় স্বস্তির বার্তা
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না