বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। একটি ‘নতুন কৌশল’-এর অংশ হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করে শেখ হাসিনাহীন একটি ‘পরিচ্ছন্ন’ বা ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের পরিকল্পনা নেপথ্যে এগিয়ে চলেছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব। তাঁরা এ প্রয়াসকে সরাসরি 'প্রতারণা' এবং 'দল ধ্বংসের চক্রান্ত' বলে অভিহিত করেছেন।
এ পরিকল্পনার আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে কিছু পরিচিত মুখকে সামনে রেখে একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামো গড়ার প্রচেষ্টা চলছে বলে দলটির নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। হাসিনা ঘনিষ্ঠ অনেক নেতাকে বাদ দিয়ে সামনে আনা হচ্ছে সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ঢাকার সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সাবেক সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি’ আদৌ কতটা গ্রহণযোগ্য?
এ বিষয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন সদ্য গঠিত এনসিপি (জাতীয় নাগরিক দল)-এর নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি অভিযোগ করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নাকি একান্ত বৈঠকে তাঁকে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ‘পরিশ্রুত’ আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তা সমর্থন পাবে। পোস্টে উল্লেখ ছিল, এপ্রিল-মে মাস নাগাদ এই নেতারা শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নতুন মঞ্চে আসবেন।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এই ষড়যন্ত্রের খবর আমরা আগেই পেয়েছি। সেনা সমর্থিত পন্থায় এ ধরনের আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা ২০০৬ সালেও হয়েছিল, তখনও ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও হবে।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে যেমন আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত, ঠিক তেমনই ভারতের কংগ্রেসের ক্ষেত্রে গান্ধী পরিবার রয়েছে। জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও রাজনৈতিক চেতনা এই পরিবারগুলোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।”
এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় কূটনৈতিক মহলও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দিল্লির এক প্রাক্তন কূটনীতিক বলেন, “আওয়ামী লীগ ভারতের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তি। শেখ হাসিনাহীন আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তা ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হবে। কারণ এই পরিকল্পনার পেছনে থাকা কিছু নেতার পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা এবং বিতর্কিত ভাবমূর্তি আমাদের উদ্বেগ বাড়ায়।”
এদিকে কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগ গঠনের চক্রান্ত বর্তমানে তাঁদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন নেতাকে প্রলোভন দেখানো হচ্ছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে। নিরাপত্তা, নির্বাচনী সুযোগ এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় নেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক উদ্যোগ। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই ৬৪ জেলার মধ্যে ২৩টির মিটিং শেষ হয়েছে। শেখ হাসিনা এই বৈঠকে কর্মীদের আশ্বস্ত করে বলছেন, “আমি দেশ ছাড়তে চাইনি, জোর করে আমাকে তাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি চক্রান্তের বিচার করা হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিচ্ছে। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা সামনে রেখে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতি নির্ধারিত হবে। শেখ হাসিনাহীন কোনো ‘পরিচ্ছন্ন’ আওয়ামী লীগ আদৌ টিকবে কি না, সে প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
ফয়জুল করীমের পক্ষে বরিশালে উত্তাল জনতা, মেয়র ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ
কার পক্ষে প্রশাসন? একে অপরকে দুষছে এনসিপি-বিএনপি
বাংলাদেশ ভালো না থাকলে ভারতও ভালো থাকবে না’—সরাসরি বার্তা দিল জামায়াত আমির
ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার: জামায়াত আমির
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না